আইসিসি কিংবা এসিসির ইভেন্টগুলোতে কীভাবে কীভাবে যেন ভারত-পাকিস্তান একই গ্রুপে থাকে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্য থাকে দুই বৈরি প্রতিবেশীকে মুখোমুখি করিয়ে বাড়তি পয়সা কামানো, কারণ এ দুই দল দ্বিপক্ষীয় সফর করছে না। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটা হয় একপেশে, যেখানে পাকিস্তান পাত্তাই পায় না ভারতের কাছে। বরং হালফিলে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বৈরথেই ঝাঁজ দেখা যায় বেশি। শুধু মাঠের খেলা নয়, বিতর্কের আঁচও ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে ইদানীং যতটা চড়া হচ্ছে, তার কাছে ফিকে পড়ে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচও।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবশেষ ম্যাচটার কথাই ধরা যাক। ভেজা মাঠে জোর করে খেলতে নামিয়ে দেওয়া, ফেইক ফিল্ডিং, কত কিছুর পর শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের ৫ রানে হার। লিটন দাসের হাফসেঞ্চুরি তো ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল ভারতের ডাগআউটে। ভারতের বিপক্ষে ১৩ দেখায় মাত্র একবারই জিতেছে বাংলাদেশ, বছর পাঁচেক আগে দিল্লিতে। তবে জয়ের কাছাকাছি গিয়েছে বেশ কয়েকবারই। তাই তো ভারত আর বাংলাদেশ ক্রিকেটে মুখোমুখি হলে ওয়াঘা সীমান্তের মতো না হলেও উত্তেজনার আঁচ জ্বলে বেনাপোল সীমান্তেও।
এবারের আসরে ভারতের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। নিউ ইয়র্কের অস্থায়ী স্টেডিয়ামের ড্রপ-ইন উইকেটেও ভারত করেছিল ৫ উইকেটে ১৮২ রান। ঋষভ পান্ত সাকিবের এক ওভারে ৩ ছক্কা মেরেছিলেন। টেস্টের মতো টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও হাফসেঞ্চুরি করে অবসরে গিয়েছিলেন পান্ত, কম যাননি হার্দিক পান্ডিয়াও। সেই ম্যাচে ১৮২ রান তাড়ার কোনো ইচ্ছেই দেখা যায়নি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে, ৯ উইকেটে ১২২ করার একমাত্র অর্জন হতে পারে সবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাওয়া।
সেই ভারতের সঙ্গে ফের দেখা, এবার সুপার এইটে। এই ম্যাচটা হেরে যাওয়া মানে সেমিফাইনালের সমীকরণ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিতাড়িত হওয়া। নিউ ইয়র্কে বেশিরভাগ ম্যাচ খেলায় ভারতের ব্যাটিংটা গ্রুপ পর্বে ডানা মেলেনি। সুপার এইটে আফগান বোলারদের পুড়িয়েছে সূর্যের তেজ। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা নি®প্রভ থাকলেও সূর্যকুমার যাদবের ব্যাটে ২৮ বলে ৫৩ রানের ইনিংসেই রানটা আফগানদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। বাংলাদেশের বিপক্ষেও এমন কিছু হওয়া অসম্ভব নয়। কোহলিকে রানে ফেরানোর দায়িত্ব নিতে পারেন তাসকিন আহমেদ, রোহিতের ব্যাট তো বাংলাদেশকে পেলে বরাবরই চওড়া।
সূর্যকুমার, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা কিংবা অক্ষর প্যাটেল; বাংলাদেশকে পেলে জ্বলে উঠতে পারেন যে কেউই।
ভারতের বোলিংটাও ধারালো। জাসপ্রিত বুমরাহ, আর্শদীপ সিংদের সঙ্গে কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল, হার্দিক পান্ডিয়া, শিভম দুবেরা মিলে ২০ ওভার চালিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পেস, স্পিন, মিডিয়াম পেস-সবই আছে রোহিতের ভাঁড়ারে। বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ তাই সামান্যই।
বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বড় ব্যবধানে হারলেও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর রান পাওয়াটা স্বস্তির। ভারতের বিপক্ষে হয়তো শেখ মেহেদিকে বসিয়ে একাদশে ফেরানো হবে শরিফুল ইসলামকে। ছয়জন ব্যাটসম্যান ব্যর্থ হলে সপ্তম ব্যাটসম্যানও ব্যর্থই হবেন, এই নীতিতে হয়তো চার পেসার খেলাবে বাংলাদেশ। সঙ্গে রিশাদের লেগ স্পিন, সাকিবের বামহাতি স্পিন আর মাহমুদউল্লাহর অফ স্পিনে ২০ ওভার পূরণের আশা। বোলিংটা বিশ্বকাপে খারাপ হয়নি বাংলাদেশের, হতাশ করছে ব্যাটিং। পাওয়ার প্লেতে মেডেন দেওয়ার মতো কান্ডও ঘটেছে। শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের কেউই রানে নেই, বরং পিঠের ওপর আছে জোড়া শূন্য। এমন ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে ভারতের বিপক্ষে জয়ের প্রত্যাশা করাটাই ভয়ের। কিন্তু ওই যে, ‘দিনটা যদি আমাদের হয়’ আর ‘টি-টোয়েন্টিতে বড় দল ছোট দল বলে কিছু নেই’ এ জাতীয় বাক্যের জোরেই বাংলাদেশ বাঁচিয়ে রাখে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা। আর কেন যেন শেষ পর্যন্ত খুব কাছাকাছিও চলে যায় জয়ের। এবারও কি তাই হবে? অন্তত ইতিহাস তো তাই বলে।