মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

২৩ বছর পর কোপার ফাইনালে কলম্বিয়া

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৪, ০৬:০১ এএম

লাতিন আমেরিকার ফুটবল তার শৈল্পিক সৌন্দর্য খুইয়েছে আরও আগেই। বদলে যাওয়া পৃথিবীর বাস্তবতায় সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে গতি আর প্রেসিং ফুটবল। শার্লটের ব্যাংক অফ আমেরিকা স্টেডিয়ামে বুধবার প্রথাগত লাতিন ফুটবলের জায়গায় তেমনই একটি ম্যাচ দেখা গেল। কোপা আমেরিকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালটি ছিল দুই আর্জেন্টাইন কোচ মারসেলো বিয়েলসা এবং নেসতর লরেনজোর মস্তিষ্কের লড়াই। সেখানে সিনিয়র বিয়েলসাকে টেক্কা দিয়ে দিয়েছেন জুনিয়র লরেনজো। জেফারসন লারমার একমাত্র গোলে ১৫ বারের কোপাজয়ী উরুগুয়েকে হারিয়ে দিয়েছে পুরো দ্বিতীয়ার্ধ ১০ জন নিয়ে খেলা কলম্বিয়া। বিনয়ী লরেনজো শ্রদ্ধা জানান, ‘বিয়েলসাকে হারাতে হলে আপনাকে অনেক মাইল হাঁটতে হবে। তিনি একজন আদর্শ আর আমি তাকে প্রচণ্ড সম্মান করি।’

কলম্বিয়ার এ জয়ে তাদের টানা অপরাজিত থাকা ম্যাচের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ২৮-এ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে কলম্বিয়া সবশেষ হারের স্বাদ পেয়েছিল ২০২২ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি। মারিও আলবার্তো কেম্পেস স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল দেশটি। ওই হারেই ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয় তাদের। বাঁকবদল হয় কোচিং প্যানেলেও। জুন মাসে কলম্বিয়ার কোচ হয়ে আসেন ’৯০ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা দলের ডিফেন্স সামলানো লরেনজো। বাংলাদেশ সময় সোমবার সকালে কোপার ফাইনালে কলম্বিয়ার অপরাজিত থাকার ধারা অব্যাহত রেখে ২৩ বছরের শিরোপা-খরা কাটানোর চ্যালেঞ্জে নিজের দেশ আর্জেন্টিনার সামনেই পড়তে হচ্ছে লরেনজোকে। এক অদ্ভুত চক্রপূরণের সুযোগ আর এক কাঠি মাত্রা যোগ করবে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

ম্যাচের শুরু থেকেই উরুগুয়ের ধাঁচে আক্রমণ আর প্রেসিং ফুটবল খেলতে থাকে কলম্বিয়া। তবে বারবার ফাউল হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হয় ম্যাচের গতি। প্রথমার্ধের ৩৯ মিনিটে কাক্সিক্ষত মুহূর্তটি আসে কলম্বিয়ার। পুরো আসরে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিতে থাকা কলম্বিয়া অধিনায়ক হামেশ রদ্রিগেজের কর্নার শটে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়ান লারমা। এগিয়ে যায় দেশটি। এবারের আসরে রদ্রিগেজের এটি ৬ষ্ঠ অ্যাসিস্ট। তাতে তিনি ছাড়িয়ে যান ২০২১ কোপা জয়ের পথে লিওনেল মেসির করা ৫টি অ্যাসিস্টের কীর্তিকে।

জ্বলজ্বলে রোদের মধ্যেই এরপর কালো মেঘ নেমে আসে কলম্বিয়ার ওপর। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে লাল কার্ড দেখেন কলম্বিয়ার দানিয়েল মুনোজ। ৩২তম মিনিটে তিনি পেয়েছিলেন প্রথম হলুদ কার্ড। এ দফায় রাগ সামলাতে না পেরে ম্যানুয়াল উগার্তের বুকে কনুই চালিয়ে বসেন। ব্যস, ২৪ ফাউল আর ৬ হলুদ কার্ডের ম্যাচে একমাত্র লাল কার্ড পেয়ে ১০ জনের দল হয়ে যায় কলম্বিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে একজন বেশি নিয়ে খেলায় স্বাভাবিকভাবেই বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল উরুগুয়ে। তবে লরেনজোর কলম্বিয়ার প্রতিটি ফুটবলার মাঠে খেলে থাকেন বাকি সতীর্থদের জন্য। এই দর্শনটিই আরও একবার প্রমাণ করেন তারা। একজন কম নিয়েও ধার কমেনি তাদের। উল্টো বেশি সুযোগ তৈরি করেছে কলম্বিয়াই। ১১ শট নিয়ে ৪টি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে তারা। সমান শট নিলেও উরুগুয়ে বল লক্ষ্যে রাখে মাত্র ২ বার। ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় উরুগুয়ে। ৬৬ মিনিটে মাঠে নামেন লুইস সুয়ারেজ। তিনি ও ডারউইন নুনেজ নষ্ট করেন বেশকটি সুযোগ। কলম্বিয়া বাড়াতে পারত গোল ব্যবধান। শেষ ৬ মিনিটের মধ্যে দুটি নির্ঘাত গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন মাতিয়াস উরিবে।

ম্যাচশেষে লরেনজো জানান সাফল্যের মন্ত্র, ‘বিরতির সময় আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল একটিই। আমরা কখনোই নিজেদের ১০ জনের দল ভাবিনি। মাঠে রাজত্ব করতে থাকা দল যখন ১০ জনে পরিণত হয় তখন তারা হেরেই মাঠ ছাড়ে। রক্ষণাত্মক না হয়ে আমরা ৪-৩-২ ফরমেশনে খেলেই সুযোগ তৈরি করতে চেয়েছি। আর ঈশ্বর আমাদের সহায় হয়েছেন।’

গ্রুপপর্বে ৯ গোলের পর স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিতে পা হড়কানোর পর শিষ্যদের প্রশংসা করে সব দায় নিজের ওপর নিয়েছেন কোচদের কোচ বিয়েলসা। বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে আমরা কলম্বিয়ার চেয়ে শক্তিশালী দল ছিলাম। তবে মাঠে যা করতে চেয়েছিলাম তা পারিনি। এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে এ ব্যর্থতার পেছনে দায়ী। প্রতিপক্ষের একজন কম নিয়ে খেলার সুযোগ লুফে নিতে পারিনি আমরা। যখন শক্তিতে পিছিয়ে থাকা দলটি একজন কম নিয়ে খেলে ম্যাচ জিতে নেয় তখনই প্রমাণ হয় সে আমার চেয়ে ভালো নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে।’ বিয়েলসার উরুগুয়ে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে রবিবার সকালে কানাডার মুখোমুখি হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত