সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে তিন দিন বন্ধ থাকার পর গত বুধবার থেকে সীমিত আকারে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে। এ অবস্থায় গতকাল পর্যন্ত চার কার্যদিবস পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে তিনদিনই পতন হয়েছে। গত বুধবারের বড় দরপতনের পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবির বিনিয়োগে ভর করে বৃহস্পতিবার বেড়েছিল অধিকাংশ শেয়ারদর-সূচক। তবে আর্থিক সক্ষমতা কম থাকার কারণে চাইলেও প্রতিদিন বাজারের হাল ধরতে পারছে না সংস্থাটি। এমন অবস্থায় ক্রেতা সংকটে গতকাল সোমবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দরপতন হয়েছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯০ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৩১টি বা ৮৩ শতাংশ দর হারিয়েছে। বিপরীতে দর বেড়েছে মাত্র ২২টির ও অপরিবর্তিত থেকেছে ৩২টির দর। এতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫৩ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজার ৩৩০ পয়েন্টে নেমেছে। চট্টগ্রামকেন্দ্রিক দ্বিতীয় পুঁজিবাজার সিএসইর লেনদেন চিত্রও ছিল প্রায় একই রকম।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের আপাত স্বাভাবিক পরিস্থিতি যে আদতে স্বাভাবিক নয়, তা প্রায় সবাই অনুভব করছেন। গত কয়েক দিন আন্দোলন ও সংহিসতা না থাকলেও রাতে কারফিউ জারি রয়েছে। শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রায় সবার মধ্যে কম-বেশি চাপা অস্থিরতা বিরাজ করছে। গতকালও লেনদেনের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদের রাস্তায় নেমে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা গেছে। এর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। আন্দোলনের মধ্যে অর্থনৈতিক আলোচনা চাপা পড়ায় এ ক্ষত সামাল দেওয়ার কোনো কার্যক্রমও দৃশ্যমান নয়। বিনিয়োগকারীরা অর্থনীতি ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা দেখছেন। ফলে বিনিয়োগে সতর্ক সবাই। এর প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে লেনদেনে।
গতকাল ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩৯২ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে ইউনিটের মধ্যে ২৪৬টি লেনদেনের মধ্যে দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে নেমে যাওয়া অধিকাংশ শেয়ার ক্রেতাশূন্য অবস্থায় পড়েছিল। যদিও লেনদেন শেষাংশে এসে এমন সিকিউরিটিজের সংখ্যা ১৭৮টিতে নেমে এসেছিল।
ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দরসীমা ৩ শতাংশে বেঁধে দেওয়ার কারণে দ্রুত ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে অনেক শেয়ার, যা পুরো বাজারে দরপতনের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় বড় অঙ্কের বিনিয়োগ নিয়ে হাল ধরার মতো বিনিয়োগকারীও নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, গত রবিবার অন্য সব খাতের শেয়ারের দরপতন সত্ত্বেও ব্যাংক খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দর বেড়েছিল। তবে গতকাল সোমবার সেই ব্যাংক খাতেরও সিংহভাগ শেয়ারের দরপতন হয়েছে। প্রকৌশল এবং ওষুধ ও রসায়ন ছাড়া বাকি সব খাতের সম্মিলিত শেয়ারদর পৃথকভাবে গড়ে ১ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত পতন হয়েছে। গতকাল ব্যাংক খাতের তালিকাভুক্ত ৩৬ কোম্পানির মধ্যে ২৭টির দরহ্রাসের কারণে খাতটির সার্বিক দরপতন হয়েছে ১ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে এ হার ছিল ১ দশমিক ২৮ শতাংশ, বীমায় ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। সিরামিক, তথ্যপ্রযুক্তি, সেবা ও নির্মাণ এবং কাগজ ও ছাপাখানা খাতের দরপতন ছিল ২ থেকে পৌনে ৩ শতাংশ পর্যন্ত।
নতুন করে দরপতনের ধারায় টাকার অঙ্কে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণও কমতে শুরু করেছে। গতকাল ঢাকার বাজারে ৪৫০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৪৮৮ কোটি টাকা।