রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

হামাসের হাল ধরছেন খালেদ মেশাল!

আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৫৫ এএম

ইসরায়েলের গুপ্তহত্যায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া ইরানে নিহত হওয়ার পর তার জায়গায় নতুন নেতা কে হবেন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-গুঞ্জন। ২০১৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। তিনি হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধানের পদে থাকলেও তাকেই এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা মনে করা হতো। তার আকস্মিক এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রশ্ন উঠেছে হামাসের হাল ধরবেন কে?

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এই তালিকায় আছেন হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফ, আল-কাসাম ব্রিগেডের ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ মারওয়ান ইসা ও হামাস আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া খালেদ মেশাল। এদের মধ্যে মোহাম্মদ দেইফ ও মারওয়ান ইসাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। অবশ্য হামাস তাদের নিহত হওয়ার বিষয়টি কখনো স্বীকার করেনি। তবে ইসমাইল হানিয়া নিহতের পর হামাসের কয়েকটি সূত্র বলেছে, হামাসের নতুন নেতা হতে যাচ্ছে খালেদ মেশাল। ১৯৫৬ সালে সিলওয়াদের পশ্চিম তীরের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন খালেদ মেশাল। মেশাল হামাস আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য। ১৯৯৬ এবং ২০১৭ সালের মধ্যে তিনি রাজনৈতিক ব্যুরোর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০০৪ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিনের মৃত্যুর পর এর নেতা নিযুক্ত হন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ১৯৯৭ সালে মেশালকে হত্যার জন্য গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রধানকে নির্দেশ দেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে বলেছিলেন।

মোসাদ এজেন্টরা জাল কানাডিয়ান পাসপোর্ট নিয়ে জর্ডানে প্রবেশ করেছিল এবং রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মেশালকে বিষাক্ত পদার্থের ইনজেকশন দিয়েছিল। জর্ডানের কর্র্তৃপক্ষ এই হত্যা চেষ্টার বিষয়ে জানতে পারে এবং মোসাদের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। জর্ডানের প্রয়াত বাদশাহ হুসেইন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের হস্তক্ষেপে নেতানিয়াহুকে প্রতিষেধক সরবরাহ করতে বাধ্য করায় এই হত্যা প্রচেষ্টা একটি রাজনৈতিক মাত্রা নেয়। মেশাল ২০১২ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো গাজা উপত্যকায় যান। রাফাহ ক্রসিংয়ে পৌঁছানোর পর বিভিন্ন দল ও জাতীয় পর্যায়ের ফিলিস্তিনি নেতারা তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং গাজা শহরে পৌঁছনো পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা তাকে অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তার ধারে ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিল। খালেদ মেশাল ছাড়া আর একজন আছেন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তিনি গাজায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার নেতা এবং ইসরায়েলের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি। তিনি গাজা উপত্যকার দক্ষিণ প্রান্তেখান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ৬১ বছর বয়সী সিনওয়ার মূলত আবু ইব্রাহিম নামে পরিচিত। তার বাবা-মা এসেছিলেন আশকেলন থেকে। ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিনিদের তাদের পৈতৃক ভিটা থেকে বিতাড়িত করা হয়। এ পর্যন্ত তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছেন সিনওয়ার। ১৯৮৮ সালে তৃতীয়বার গ্রেপ্তারের পর হামাসের এই নেতাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলেও হামাস-ইসরায়েল বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে তিনি মুক্তি পান এবং গাজায় ফিরে আসেন। এ ছাড়া আরেকজন আছেন আল-কাসেম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফ। ফিলিস্তিনিদের কাছে তিনি ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে এবং ইসরায়েলিদের কাছে ‘মৃত্যুর মানুষ’ বা ‘নয়টি জীবন নিয়ে জন্মানো যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েলের ফেরারী সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম সবার উপরে। তবে গতকালও ইসরায়েল দাবি করেছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া আল-কাসাম ব্রিগেডের ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ মারওয়ান ইসাও হতে পারেন হামাস প্রধান। তবে তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি ইসরায়েলের। অবশ্য হামাস এখন পর্যন্ত এ তথ্য নিশ্চিত করেনি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত