শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ফেসবুকের হিরো যেকোনো সময় জিরো

আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৯ পিএম

প্রযুক্তির উন্নতিতে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে বিশ্ব। সময় যত গড়াচ্ছে ততই আবিষ্কার হচ্ছে যোগাযোগের নতুন নতুন প্লাটফর্ম। যে প্লাটফর্মগুলোতে মানুষ নিজেকে বুদ করে রাখছেন। তেমনি স্যোশাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম ফেসবুক। যে প্লাটফর্মে দেশের শহর থেকে গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ সংযুক্ত। প্রায় সববয়সী মানুষ এখন খবর কিংবা বিনোদন পেতে ফেসবুককে বেছে নিয়েছেন। এই ফেসবুকের কল্যাণে এখন খুব সহজেই জনপ্রিয়তা অর্জন সম্ভব। তবে সেই জনপ্রিয়তা কতটা দীর্ঘমেয়াদী তা নিয়ে এখন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

ছাত্র-জনতা আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফেসবুকে দেশজুড়ে জনপ্রিয় কয়েকজন আড়ালে চলে গেছেন। এমনি কয়েকজন হচ্ছেন হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ফারাজ করিম চৌধুরী ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি। এই তিনজনেই মানবসেবাসহ সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে ফেসবুকে সরব ছিলেন। দেশজুড়ে যাদের অগনিত ভক্ত ছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট পর থেকে তাদের নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। ফলে ফেসবুক কার্যক্রম থেকে তারা নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন। এক সময়ের ফেসবুকের হিরো, পটপরিবর্তনের হাওয়ায় এখন জিরোতে বলে মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। এছাড়াও তাদের কার্যক্রম লোক দেখানো বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।

যেভাবে উত্থান ঘটে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ফেসবুকে ব্যাপক জনপ্রিয় মুখ। তিনি নিজ এলাকার ছোট ছোট সমস্যা নিজের অর্থায়নে সমাধান করতেন। সেসব কর্মকান্ড ফেসবুকে লাইভ করার মাধ্যমে ফেসবুকে তার উত্থান ঘটে। দেশে নানা অনিয়মের মধ্যে তার এসব কর্মকান্ড তরুণ প্রজন্মসহ সবাই ভালোভাবে নিতেন। এভাবে তিনি দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করেন।
দুর্নীতি-অনিয়মের বিপক্ষে কথা বলার পাশাপাশি তিনি ফুটবল খেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নিজের নামে নিজ এলাকায় একটি ফুটবল একাডেমিও আছে তার। সেই একাডেমির খেলোড়ারদের নিয়ে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলেছেন। সেই খেলাগুলো হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হতেন। বলা চলে ব্যারিস্টার সুমন যেখানেই যায় সেখানেই মানুষের ঢল নামে। সেই জনপ্রিয়তা তাকে সংসদ সদস্যও বানায়। কিন্তু সেই জনপ্রিয়তা এখন শূণ্যের কোঠায় পৌঁছেছে।

দেশে জুলাই-আগস্টে চলা ছাত্র আন্দোলনে শুরুর দিকে নিরব ছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তিনি মুখ খুলেন। সেই আন্দোলনে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে তার জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালানোর পর ব্যারিস্টার সুমন ফেসবুক প্রচারণা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। সবশেষ গত সোমবার তিনি লাইভে আসেন। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, এখন তিনি রিমান্ডে আছেন। ফেসবুকে ব্যাপক জনপ্রিয় সুমন এখন জিরো হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছেন। তাকে নিয়ে নেটিজেনরা নানা কটাক্ষ করে পোস্ট দিচ্ছেন।

ফেসবুকে মানবতার ফেরিওয়ালা ছিলেন ফারাজ করিম

চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ছেলে ফারাজ করিম। যাকে ফেসবুকে মানুষ মানবতার ফেরিওয়ালা বলেন। চট্টগ্রামের রাউজানে যিনি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতেন। বিশেষ করে সন্তানের দ্বারা বাবা-মা নির্যাতন রোধ সংক্রান্ত কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করার মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এছাড়াও বন্যার সময় অসহায় মানুষদের সহযোগিতা, কোরবানি ও ঈদে অস্বচ্ছলদের মাঝে আর্থিক অনুদানসহ ফিলিস্তিন ইস্যুতে তিনি সহযোগিতা পাঠিয়েছিলেন। এসব কর্মকান্ডের ভিডিও তিনি তার নিজ ফেসবুক পেজে শেয়ার করতেন। এসব ভিডিওয়ের মাধ্যমে তিনি দেশজুড়ে মানবতার ফেরিওয়ালা উপাধি পান। কিন্তু গত ৫ আগস্ট পর তিনি ফেসবুক পেজে নিষ্ক্রিয় পাশাপাশি নিজেও আত্মগোপনে গেছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শতশত শিক্ষার্থী নিহত হলেও ফারাজ করিমকে কোন মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। অথচ ফেসবুকে তিনি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। আন্দোলন চলাকালেই তরুন সমাজ তাকে প্রত্যাখান করে।

দেশজুড়ে জনপ্রিয় ফারাজ করিমের এই অবস্থা হওয়ার পিছনে ভয়ংকর কিছু কর্মকান্ড রয়েছে। গত ৫ আগস্ট পর সেই কর্মকান্ডগুলো সামনে এসেছে। রাউজানে তার বাবার বিরুদ্ধে কথা বললেই ‘আয়নাঘরে’ নিয়ে নির্যাতন করতেন ফারাজ করিম। এছাড়াও জমি দখলও নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ফেসবুকের এক সময়ের হিরো ফারাজ এখন ক্ষমতার পালাবদলে আত্মগোপনে রয়েছেন। তার ফেসবুক পেজটিও এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একসময়ের ফেসবুকের রাজাকে এখন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না।

তরুণ-তরুণীদের আইকনখ্যাত তৌহিদ আফ্রিদি আড়ালে কেন?

ফেসবুকে তরুণ কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে অন্যতম তৌহিদ আফ্রিদি। এক শ্রেণির তরুণ-তরুণীদের কাছে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেই হাজার হাজার তরুণ-তরুণী তার সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমনকি বিভিন্ন বিষয়ে করা তার ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হতো। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তিনি নিশ্চুপ ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শতশত শিক্ষার্থী ও জনতা পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও তিনি চুপ ছিলেন। ফলে আন্দোলন চলাকালেই ছাত্র-জনতা তাকে বয়কট করেন। গত ৫ আগস্টের পর তৌহিদ আফ্রিদি ফেসবুকে নিজের কর্মকান্ড থেকে সরে এসেছেন। এখন আগের মতো তাকে কার্যক্রম করতে দেখা যাচ্ছে না।

এই তিনজনসহ আরও অনেক ফেসবুক সেলিব্রেটিকে গত ৫ আগস্ট পর থেকে ফেসবুকে হিরো থেকে জিরো হতে দেখা গেছে। নেটিজেনরা বলছেন, ‘ফেসবুকে সহজেই যেমন জনপ্রিয় হওয়া যায়, তেমনি যেকোনো সময় হিরো থেকে জিরো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঠিক এমনটিই ঘটছে তাদের ক্ষেত্রে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত