ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে পেশাভিত্তিক দক্ষতার পাশাপাশি দক্ষ হতে হবে সফট স্কিলে। দৈনন্দিন অভ্যাস ও জীবনাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে সফট স্কিলে দক্ষ হতে এর চর্চা করতে হয় শিক্ষাজীবনেই। ক্যারিয়ারে সফলতা পেতে সহায়তা করে এমন সফট স্কিলে দক্ষ হওয়ার উপায় জানিয়েছেন শাহরিয়ার হোসেন
আবেগিক বুদ্ধিমত্তা
গাণিতিক দক্ষতা, সাধারণ জ্ঞানে ব্যুৎপত্তি, বুদ্ধিভিত্তিক সমস্যা সমাধানে দক্ষতাকে এই কয়েক বছর আগেও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন আইকিউর বদলে ইকিউ বা আবেগিক বুদ্ধিমত্তাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ উৎপাদন ও বাজারজাত ব্যবস্থা মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িত থাকে। মানুষের হৃৎস্পন্দনকে সঠিক সময়ে বুঝে, সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপরই নির্ভর করে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে টিকে থাকা। তাই সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এমন কর্মীদেরই পছন্দ করে, যাদের আবেগিক বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে দক্ষতা রয়েছে।
যোগাযোগ দক্ষতা
মানুষ সামাজিক প্রাণী। সে একা বাঁচতে পারে না। জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য মানুষ একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তার প্রয়োজনের কথা সে প্রকাশ করে নানাভাবে। এই নানা প্রকাশভঙ্গির প্রতিটি মাধ্যমই যোগাযোগ ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। নিজের কথাটি মুখে সুন্দরভাবে, অল্পকথায় বুঝিয়ে বলা ও লেখার সময় প্রাঞ্জল ভাষায় টু দ্য পয়েন্টে লেখার ক্ষমতা শক্তিশালী যোগাযোগ দক্ষতার স্বাক্ষর বহন করে। করপোরেট জগতে সুন্দর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেওয়ার ক্ষমতাও যোগাযোগ দক্ষতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অভিযোজন ক্ষমতা
নতুন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে সহজে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে অভিযোজন ক্ষমতা বলে। চাকরি ক্ষেত্রে সবসময় নানা পরিস্থিতি ও মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হয় বলে দ্রুত অভিযোজন ক্ষমতাকে চাকরির বাজারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। যাদের ছোটবেলা থেকেই চমৎকার সামাজিকীকরণ হয়েছে, তারা দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। তাদের অভিযোজন ক্ষমতা ভালো। অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা একটি ভালো উপায়।
নির্ভরযোগ্য
একজন নিয়োগদাতা সেই কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে উচ্চতর পদে উন্নীত করেন যিনি নির্ভরযোগ্য। নিজেকে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ করতে প্রতিটি কাজ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তা যথাসময়ে সম্পন্ন করার চেষ্টা করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারলে নির্ভরতা জন্মে এমনিতেই।
ভালো শ্রোতা
একজন সচেতন সক্রিয় শ্রোতা খুব সহজেই মানুষের আস্থার জায়গাটি অর্জন করে নেন। সচেতনভাবে কারও কথা শুনলে আপনি খুব সহজেই শনাক্ত করতে পারবেন তিনি আপনার কাছ থেকে কী ধরনের আচরণ প্রত্যাশা
করেন। তাই ভালো শ্রোতা হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
দলে কাজ করার মানসিকতা
দলীয় কাজে অভ্যস্ত হলে খুব সহজেই কর্মক্ষেত্রে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়, যা অফিসে কাজের পরিবেশ সুন্দর রাখে। দলীয় কাজে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য বেশি বেশি স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তা ছাড়া শিক্ষাজীবনে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিলেও দলীয় কাজ করার অভিজ্ঞতা বাড়ে।
সময় ব্যবস্থাপনা
দিনের সময় নির্দিষ্ট। চাকরির দায়িত্ব পালনের জন্য সময়ও নির্ধারিত। এই স্বল্পসময়ে প্রয়োজনীয় ও অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হওয়া। স্বল্পসময়ে সব কাজ করা সম্ভব না বলেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করলে সময় ব্যবস্থাপনায় সফল হওয়া সম্ভব।
মানুষের সক্ষমতাকে বোঝা
মানুষ একা কাজ করতে পারে না। তাই অন্যকে নিয়ে তার কাজ এগিয়ে নিতে হয়। এজন্য প্রয়োজন মানুষের সক্ষমতাকে বুঝতে পারা। তা না হলে ভুল মানুষের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করলে সময় ও সম্পদ দুয়েরই অপচয় হয়।
সততা
পেশাগত জীবনে সততার গুরুত্ব অপরিসীম। যেকোনো পেশায়, কী চাকরি, কী ব্যবসায়Ñ সততার চর্চা না থাকলে তা বেশিদিন টেকে না। আর তাতে উন্নতিও করা সম্ভব হয় না। সততাকে তাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবাপন্ন হওয়া
একে অন্যকে সহযোগিতা করলেই সুন্দরভাবে প্রত্যেকেই নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। তাই কর্মক্ষেত্রে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবাপন্ন মানুষের আধিক্য বিশেষভাবে প্রত্যাশিত। সেজন্য নিয়োগদাতারা এমন ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেন ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করেন, যারা অন্যকে সহযোগিতা করেন।