সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

শিক্ষকদের নিয়েও রসিকতা করা যায়!

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৪ এএম

বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় জ্ঞানচর্চার মুক্তাঙ্গন। বিশ্ববিদ্যালয় এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হয়। আর এ যাত্রায় সহযাত্রী হন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে থাকে পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এক মধুর সম্পর্ক। যদিও নানা তিক্ততার সংবাদ এখন আমাদের কানে আসে। কিন্তু সেটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পার্থক্য হলো, এটি দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় আর সে কারণেই নানা বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। একটা সময় ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রীর মধ্যে কথোপকথনকে অপরাধ বলে বিবেচনা করা হতো। প্রক্টর বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতেন যেন, সহপাঠী ছাত্র ও ছাত্রী যেন পরস্পরের সঙ্গে কথা না বলে। কালের বিবর্তনে আজ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে বাক্যালাপ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এখনো নানা রূপ ধারণ করে আছে। অনেক শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের থাকে সম্ভ্রম মিশ্রিত দূরত্ব, আবার অনেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশেছেন বন্ধুর মতো। এটি যেমন আজকের বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য তেমনটিই ছিল ষাটের দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বরূপ। কবি ও প্রাবন্ধিক মনজুরে মওলা তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে স্মৃতি রচনা ‘কোথায় গেলো তারা’য় এমন কয়েকটি মিষ্টিমধুর স্মৃতিচারণা করেছেন।

‘কোথায় গেলো তারা’ নিবন্ধে কবি তাদের সময়ের উজ্জ্বল সহপাঠিনীদের বেশ প্রশংসা করেছেন। তাদের প্রগলভতা, তাদের শিক্ষা, তাদের দ্বিধাহীন চলন, মিষ্টি হাসি, বাগ্মিমার সঙ্গে তুলে ধরেছেন রসিকতার ঢঙও। কথা প্রসঙ্গে সেখানেই উঠে এসেছে, ক্লাসরুমে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্র ও ছাত্রীদের রসিকতার দৃশ্য, যা সাধারণ মানুষের কাছে হয়তো বিসদৃশই মনে হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে যে উচ্ছ্বল পরিবেশ বিরাজ করে সে বাস্তবতায় দেখলে এগুলো নিছক রসিকতা মাত্র। মনজুরে মওলা সেই দৃশ্যই ফুটিয়ে তুলেছেন তার নিবন্ধে।

লেখকের একজন শিক্ষক ছিলেন যিনি পড়ানোর পরে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষার্থীদের কাছে জিজ্ঞেস করলেন, বোজছো? ছাত্ররা জবাব দিল, জি, স্যার! শিক্ষক তখন বললেন, কী কইলা? আমি চৌদ্দ বছর পড়াইয়া বোজবার পারলাম না, আর তোমরা একদিন শুইনাই বুইজা গেলা? পরের দিন শিক্ষক আবারও প্রশ্ন করলেন, বোজছো? ছাত্ররা এবার উত্তর দিল, না, স্যার, বুঝিনি। তখন শিক্ষক বললেন, বোজবা কেমনে? পড়ানোর সময় মাইয়াগো মুখের দিকে চাইয়া থাকলে বোজবা কেমনে? এখানেই শেষ নয়। পরের দিন শিক্ষক পড়িয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন, বোজছো? ছাত্ররা উত্তর দিল, তারা বুঝতে পেরেছে। শিক্ষক বললেন, তিনি চৌদ্দ বছর পড়িয়েও বুঝতে পারেননি। ছাত্ররা এবারে কিন্তু শিক্ষকের কথা শেষ করতে দিল না। তারা বলল, স্যার, বোজবেন কেমনে? পড়ানোর সময় মাইয়াগো মুখের দিকে চাইয়া থাকলে বোজবেন কেমনে?

সে সময়ে এমন রসিকতাও শিক্ষকরা গ্রহণ করতেন খোলা মনে।

আরেকবার, টিউটোরিয়াল ক্লাসে এক শিক্ষক বললেন, দ্যাখো, সময় কত পাল্টে গেছে। তোমরা ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে বিকেলে ক্লাস করছো, গল্প করছো, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন এমনটি ছিল না। তখন প্রক্টর তক্কে তক্কে থাকতেন, কোনো ছেলেকে কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখলেই তাদের খপ করে ধরে ফেলতেন। এক নারী শিক্ষার্থী তখন ওই শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি কখনো এমন ধরা খেয়েছেন? শিক্ষক তাড়াতাড়ি করে উত্তর দিলেন, না, না। তেমন কেন হবে? আমি কখনো মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করিনি। তখন ওই শিক্ষার্থী বললেন, আপনার হয়তো সাহসই হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে শিক্ষকদের সঙ্গেও যে এমন রসিকতা করা যায়, তা হয়তো এখনো অনেকেই ভাবতে পারেন না।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত