ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য জীবন দিতে হয়েছিল অনেককে। এ দেশে একটি শিশু জন্ম নিয়েই যে মধুর ভাষায় মা ডাকের বুলি আওড়ায় তা হলো মধুময় বাংলা ভাষা। এ ভাষাতেই কত সুরের লহরী সৃষ্টি হয়েছে। আবহমান গ্রামবাংলার রূপছন্দ নিয়ে তৈরি হয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা অমর জাতীয় সংগীত। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। এ গানের মর্মস্পর্শী সুরে চিরায়ত গ্রামবাংলার চিত্রটিই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তাই তো এ ভাষা রক্ষায় অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি দেশের দামাল ছেলেরা।
পাকিস্তানের শাসক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার ঘোষণা করেন। আর তখনই তার প্রতিবাদ করা হয়। কিন্তু তিনি প্রতিবাদের কোনো কর্ণপাতই করেননি। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলার সমগ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। তারা ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এতে ছাত্র-জনতার মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া জাগে। ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকেই তখনকার শাসকগোষ্ঠী ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে রাখে। কিন্তু পরের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে মিছিলে গুলি করা হয়। রাজপথ হয়ে পড়ে রক্তে রঞ্জিত। গুলিতে নিহত হন সালাম, জব্বার, রফিক, বরকতসহ অনেকেই।
তাদের ত্যাগের মহিমা বুঝতে অসুবিধা হয়নি বিশ্ববাসীর। সে জন্যই তো বিশ্বব্যাপী এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। ইউনেস্কোর একদল ভাষাবিজ্ঞানীর দীর্ঘ গবেষণার পর পৃথিবীর সব থেকে শ্রুতিমধুর ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলা ভাষা। এ ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা হিসেবে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। আবার অনেক দেশের অফিসিয়াল ভাষাও বাংলা করা হয়েছে। মা আর মাতৃভূমির মতো মাতৃভাষাকেও আমরা জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসি।