কৃষিতে শ্রমিক সংকট, উচ্চ উৎপাদন খরচ এবং সময় অপচয়ের দিন ফুরিয়ে আসছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের সাকোয়া গ্রামে ৫০ একর জমিতে যন্ত্রের সাহায্যে ব্রি-ধান ৯২ জাতের বোরো ধান চাষ এ সম্ভাবনারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদের এ উদ্যোগ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদের পুরো প্রক্রিয়া যন্ত্রের মাধ্যমে হয়। বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে ধান রোপণ এবং ফসল কাটা সবকিছুতেই ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্র। এ পদ্ধতিতে বীজতলা প্লাস্টিক ট্রেতে তৈরি করা হয় এবং রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার মেশিন দিয়ে জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়। সময় এবং শ্রম যেমন কমছে তেমনি ব্যয়ও কমে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
কৃষি বিভাগ জানায়, এই পদ্ধতিতে প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ প্রায় ৯ হাজার টাকা, যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে খরচ হতো ১৬ হাজার টাকা। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা রোপন করতে পারে। ধান পাকলে একই মেশিন দিয়ে কাটা ও মাড়াই করা যায়, যা সময় এবং শ্রম বাঁচানোর পাশাপাশি ফসলের গুণগতমান বজায় রাখতে সহায়তা করে।
সদর উপজেলার সাকোয়া গ্রামের কৃষক প্রভাত চন্দ্র জানান, ‘মেশিন দিয়ে ধান রোপন হচ্ছে দেখতে খুব ভালো লেগেছে। খরচ কম হওয়ায় আশা করছি আগামীতে নিজের উদ্যোগেই এ পদ্ধতি ব্যবহার করব।’
২৩ জানুয়ারি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. সাইখুল আরিফিন, অতিরিক্ত পরিচালক গোলাম মোস্তফা, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদসহ কৃষি বিভাগের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, ‘কৃষিকে আধুনিক, লাভজনক এবং টেকসই করতে যান্ত্রিকীকরণ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ এই উদ্যোগের একটি অংশ। একসঙ্গে রোপণ, পাকা এবং কাটা ধান কৃষকদের খরচ কমাবে এবং লাভ বাড়াবে।’ তিনি আরও জানান, আগ্রহী কৃষকরা কৃষি অফিস থেকে কারিগরি সহায়তা নিতে পারবেন। কৃষি শ্রমিক সংকট কমাতে এবং ফসল উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সমলয় পদ্ধতির এই উদ্যোগে একই মাঠের কৃষকরা একত্রে কাজ করে বেশি উৎপাদনের সুযোগ পাচ্ছেন। একই সময়ে ফসল উৎপাদন এবং কাটা এ অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে।
লালমনিরহাটে যান্ত্রিক পদ্ধতির সফল বাস্তবায়ন অন্য অঞ্চলের কৃষকদেরও অনুপ্রাণিত করবে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কৃষি আধুনিক হচ্ছে, আগামীতে এ ধরনের উদ্যোগ দেশের খাদ্যনিরাপত্তা এবং কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।