বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রোড সেফটির প্রতিবেদন

নিহতের ৪৩.৪২% মোটরসাইকেলে

  • দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে
  • ৪১.৫৪ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে
  • রাতে বেশি ঘটেছে দুর্ঘটনা
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৮ এএম

দেশে গত জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬২১টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬০৮ এবং আহত হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজার ১০০ জন। নিহতের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৬৪ জনের, যা মোট নিহতের ৪৩.৪২ শতাংশ। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিষ্ঠানটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এতে বলা হয়, দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২৬৪ জন বা ৪৩.৪২ শতাংশ, বাসের যাত্রী ২৮ জন বা ৪. ৬০ শতাংশ, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৩৪ জন বা ৫.৫৯ শতাংশ, প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১৯ জন বা ৩.১২ শতাংশ, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৯০ জন বা ১৪.৮০ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম) ১৮ জন বা ২.৯৬ শতাংশ এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ১২ জন বা ১.৯৭ শতাংশ।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২১৪টি বা ৩৪.৪৬ শতাংশ ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ২৬৫টি বা ৪২.৬৭ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ৯৬টি ১৫.৪৫ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে এবং ৪২টি ৬.৭৬ শতাংশ শহরের সড়কে এবং ৪টি ০.৬৪ শতাংশ অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৯৭১টি। এর মধ্যে বাস ১৪২, ট্রাক ১৯১, কাভার্ড ভ্যান ২৪, পিকআপ ২৬, ট্রাক্টর ১২, ট্রলি ১৮, লরি ৬, ডাম্পট্রাক ১১, মাইক্রোবাস ১৯, প্রাইভেট কার ১৫, অ্যাম্বুলেন্স ২, মোটরসাইকেল ২৭৯, থ্রি-হুইলার ১৩৭ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪২ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-টমটম-মাহিন্দ্র-বোরাক-লাটাহাম্বা), বাইসাইকেল-রিকশা ১৬ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ৩১টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৭.০৮ শতাংশ, সকালে ৩১.০৭ শতাংশ, দুপুরে ১৭.২৩ শতাংশ, বিকেলে ১৫.৪৫ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৯.৯৮ শতাংশ এবং রাতে ১৯.১৬ শতাংশ।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৭.৬৯ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬.৪৮ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৮১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৭.৪৩ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.৬১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৫.৭৮ শতাংশ; খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৫৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১২.১৭ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৪.৯৩ শতাংশ; সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৭৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.২৫ শতাংশ; রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.৩৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.১৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৫.৯২ শতাংশ ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭২টি দুর্ঘটনায় ১৬১ জন নিহত হয়েছে। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ৩১টি দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত হয়েছে। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় ৪২টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম পঞ্চগড় জেলায়। এই জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৩১ জন আহত হয়েছে।

এদিকে সংগঠন থেকে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে জানানো হয়, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজির জন্য মূলত দুর্ঘটনা ঘটছে।

সংগঠন থেকে সুপারিশগুলোর মধ্যে জানানো হয়, দুর্ঘটনা রোধের জন্য দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে। চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে। সেই সঙ্গে বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করাসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত