শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

প্রশাসনিক দায়িত্ব

শাঁখের করাতের নিচে রাবি!

  • আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকে অনাস্থা শিক্ষার্থীদের
  • অন্যপন্থিতে নেই প্রয়োজনীয় লোক
  • নতুন নিয়োগ দিয়ে সমাধানের আশ্বাস 
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫০ এএম

বিতর্কিত হওয়ার ভয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওমীপন্থি শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ দিতে পারছে না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নতুন প্রশাসন। আবার দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় বিএনপি-জামায়াতপন্থি নবীন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও কম। ফলে সিনিয়র শিক্ষকদের বাড়িতে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন প্রশাসনিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, তেমনি অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমেও জটিলতা দেখা দেওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল সূত্রে জানা যায়, আগস্টের পর প্রক্টর দপ্তরের সহকারী প্রক্টর পদে পাঁচ অধ্যাপককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অফিস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আতিকুল ইসলামকে। ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে (সিসিডিসি) সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপককে। অথচ এ পদের সবই অপেক্ষাকৃত জুনিয়র (সহকারী, সহযোগী অধ্যাপক) শিক্ষকদের পদ। আবার ছাত্র উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনককে। অথচ এ পদে সাধারণত একজন অধ্যাপককেই নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে জুলাই অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অনেকেরই ভাষ্য। 

একই অবস্থা আবাসিক হলগুলোয়। হলের আবাসিক শিক্ষক পদে সবচেয়ে জুনিয়র শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। নতুন প্রশাসন আসার পর এই তুলনামূলক ছোট পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষকদের। 
তবে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমীরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব পদে কোন পদমর্যাদার শিক্ষকরা নিয়োগ পাবেন তার কোনো নির্দিষ্টতা নেই। তবে একটা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটা দলের প্রতিনিধিত্ব করে তারা ক্ষমতায় যায় এবং ক্ষমতায় থেকে তারা মনে করে তার ঘরানার লোককে প্রশাসনে দিলে তার প্রশাসন ভালো চলবে। অন্যপন্থি বা অন্য রাজনৈতিক দলের কাউকে দায়িত্ব দিলে তারা মনে করে হয়তো আমাদের ক্ষতি হতে পারে। বিভিন্ন সমীকরণ আছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতায় যারা থাকে তারা এ কাজগুলো করে।
 
তিনি বলেন, গত ১৫-১৬ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা অন্যায়, অবিচার, লুটপাট সবই করেছে। সঙ্গত কারণেই তাদের যদি এখন বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে প্রশাসন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। তাই হয়তো বর্তমান প্রশাসন চায় না এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হোক। বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হোক। 

জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে জড়িত আইন অনুষদের সাবেক ডিন ও ওই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন যারা সহকারী বা সহযোগী অধ্যাপক আছেন তাদের অধিকাংশই আগের প্রশাসনের আমলে বা ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। তাহলে তারা কীভাবে নিয়োগ পায়। এখন তো ফ্যাসিবাদের লোকজন নিয়োগ পাওয়ার কথা না। সেই হিসেবে অনেকটা বাধ্য হয়ে চাপ নিয়ে হল ও প্রশাসনিক পদগুলো চালাতে হবে।’

রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামীপন্থিদের বাইরে অধিকাংশ শিক্ষক এখন অধ্যাপক হয়ে গেছেন। এ ছাড়া প্রশাসনের বড় একটা অংশ পদত্যাগ করেছে। তাদের তো আর পুনর্নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এ পদগুলোতে যারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন তাদের এবং কিছু মানুষকে অনুরোধ করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে কয়েকজন শিক্ষককে সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় আমরা সেদিকেও যেতে পারছি না। আমাদের শিক্ষার্থীরাও আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মেনে নিতে পারছে না। আশা করছি নতুন নিয়োগ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত