নিয়োগদাতারা চুক্তিভিত্তিক কাজ বা চাকরি দেওয়ার আগে সাক্ষাৎকারে প্রার্থীর পোর্টফোলিও দেখতে চান। পড়াশোনা শেষে চট করে যখন প্রার্থীরা পোর্টফোলিও তৈরি করতে চান তখন পড়েন বিপদে। কারণ একটি পোর্টফোলিও সমৃদ্ধ হয় সময় নিয়ে। এ কারণে ছাত্রজীবনেই পোর্টফোলিও তৈরি করা উচিত। লিখেছেন নূরে জামান
পোর্টফোলিও
একজন ব্যক্তির দক্ষতা, অর্জন কিংবা গুণাবলি উপস্থাপনের একটি মাধ্যম হচ্ছে পোর্টফোলিও। পেশাগত জীবনে নিজেকে উপস্থাপন জন্য পোর্টফোলিও তৈরির বিকল্প নেই। পোর্টফোলিও হলো একজন ব্যক্তির কাজের নমুনা, যা দেখে বোঝা যায় ওই কাজে ব্যক্তির দক্ষতা, আগ্রহ, অভিজ্ঞতা প্রভৃতি। যার পোর্টফোলিও যত বেশি সমৃদ্ধ, তিনি সেই কাজের তত বেশি দক্ষ। পোর্টফোলিও দেখেই প্রার্থীর দক্ষতা যাচাই করে ফেলেন নিয়োগদাতারা।
পোর্টফোলিওর প্রকারভেদ
পোর্টফোলিও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এই প্রকারভেদ ঘটে উদ্দেশ্য ও পেশার ভিন্নতার ভেদে। তবে অধিকাংশ পেশার জন্যই পোর্টফোলিও তৈরি করা যায়। আধুনিক যুগে সব পেশার জন্য পোর্টফোলিও তৈরি করা উচিত। তবে সব পেশার নিয়োগকারীরা সবসময় পোর্টফোলিও দেখতে চান না। কিন্তু প্রস্তুতি নিতে তো দোষ নেই। কিছু পেশা আছে পোর্টফোলিও তৈরি করা অবশ্য কর্তব্য। যেমন গ্রাফিক ডিজাইনার, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, ওয়েব ডিজাইনার, অ্যানিমেটর, থ্রিডি আর্টিস্ট, থ্রিডি অ্যানিমেটর, ওয়েব ডেভেলপার, চিত্রশিল্পী, মডেল, অভিনেতা, পরিচালক প্রভৃতি পেশার যেকোনো সাক্ষাৎকারে পোর্টফোলিও দেখতে চাওয়া হয়। অন্যান্য পেশায় আগ্রহীদেরও পোর্টফোলিও তৈরি করে রাখা উচিত বাড়তি সতর্কতা হিসেবে, যেন নিয়োগকর্তা দেখতে চাইলে তা প্রদর্শন করা যায়। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পোর্টফোলিওর ধরনেও এসেছে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। এখন পোর্টফোলিও হতে পারে অনলাইনে কিংবা প্রিন্টেড। আবার সাক্ষাৎকারেও এসেছে পরিবর্তন। অনেক সাক্ষাৎকারই এখন অনলাইনে হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে ভার্চুয়াল পোর্টফোলিও। আর শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে হয় এমন সাক্ষাৎকারে প্রিন্টেড পোর্টফোলিও অগ্রাধিকার পাবে। আবার অনেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ইন্টারভিউর আগেই অনলাইন পোর্টফোলিও দেখে ইন্টারভিউর প্রার্থীর শর্টলিস্ট করেন। তাই প্রস্তুত করতে হবে অনলাইন এবং প্রিন্টেড দুই ধরনের পোর্টফোলিওই।
প্রফেশনাল পোর্টফোলিও
প্রফেশনাল পোর্টফোলিওতে আগের কাজের অভিজ্ঞতা, পদ্ধতি, কাজের নমুনা ও কিছু কিছু মূল্যায়িত হওয়ার প্রমাণপত্র যুক্ত করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ফরম্যাটে পোর্টফোলিও বানানো সম্ভব। প্রিন্টেড পোর্টফোলিওতে অভিজ্ঞতা ও অর্জন সংক্ষেপে লিখুন, তার সপক্ষে প্রমাণ যুক্ত করুন। পত্রিকার কাটিং বা সম্মাননা, প্রশংসাপত্রও যুক্ত করতে পারেন। অনলাইন পোর্টফোলিও সাধারণত তৈরি হয় ওয়ার্ড ডকুমেন্ট, এক্সেল শিট, পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ও ব্লগ এবং বিভিন্ন কমিউনিটি ওয়েবসাইটের সাহায্যে। এসব ওয়েবসাইটে ব্যক্তির কাজের লিংক যুক্ত করে দিতে হয়। যেন সেগুলো ভিজিট করে যে কেউ তার সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। প্রোগ্রামার ও ডেভেলপারদের জন্য গিটহাব, গ্রাফিক ডিজাইনার ও ইউএক্স ডিজাইনারদের জন্য বিহ্যান্স, আর্টিস্টদের জন্য ডিভিয়েন্টআর্ট হলো এমন কয়েকটি কমিউনিটি ওয়েবসাইট।
শিক্ষার্থীদের পোর্টফোলিও
আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ কম। তবুও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজের সুযোগ ও তার স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ক্যারিয়ার গড়তে চান এমন ক্ষেত্রে তাই প্রথমেই খোঁজ নিন কোথাও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজের সুযোগ আছে কি না। একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ পাওয়া কম নয়। স্বেচ্ছাসেবককে অর্থ দিতে হয় না বলে তার ভুলকেও বড় করে দেখা হয় না। এর ফলে সহজ পরিবেশে কাজ শেখা যায়। তবে এমন প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে, যে প্রতিষ্ঠান কাজ শেষে প্রশংসাপত্র দেয়। এসব প্রশংসাপত্র পোর্টফোলিও সমৃদ্ধ করবে। তাছাড়া দক্ষতা প্রমাণিত হলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ দেয়। এ অভিজ্ঞতা গ্রহণ করা উচিত। কাজ শেখার পাশাপাশি অর্থপ্রাপ্তি মন্দ কী!