শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বিএসিবি’র তথ্য

প্রয়োজনের মাত্র ৭ শতাংশ বায়োকেমিস্ট 

  • দরকার ২০ হাজার, আছেন ১৪০০
  • জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে বায়োকেমিস্ট নেই
  • প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন থেকে ধারা ৯-এর ৪ নম্বর উপধারা বাতিলের দাবি
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম

দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে কোনো বায়োকেমিস্ট নেই। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে রোগনির্ণয়ের কাজ করছেন টেকনিশিয়ানরা। এমনকি যেখানে স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ২০ হাজার বায়োকেমিস্ট দরকার, সেখানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকগুলোয় রোগনির্ণয়ে কাজ করেন মাত্র ১ হাজার ৪০০ জন। অর্থাৎ ৯৩ শতাংশ বায়োকেমিস্ট ঘাটতি নিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। 

প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের’ একটি ধারা বাতিল ও ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টদের সাত দফা দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টস। এতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাবরেটরি প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাতেমা খান মজলিস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তিনি জানান, দেশে ৬৩৯টি সরকারি হাসপাতাল, ৫ হাজার ৫৭৭টি বেসরকারি হাসপাতাল, ১০ হাজার ৭২৭টি রোগনির্ণয় কেন্দ্র এবং ১৪০টি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। অথচ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কোনো সরকারি হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে একজনও বায়োকেমিস্ট নেই। বায়োকেমিস্টের পরিবর্তে রোগনির্ণয় করছেন টেকনিশিয়ানরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দেশে মাত্র ৯টি প্রতিষ্ঠান রোগনির্ণয় ও সক্ষমতায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এসব প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি পরিচালনা করেন বায়োকেমিস্টরা। দেশের কোনো সরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের রোগনির্ণয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হোসেইন উদ্দিন শেখর বলেন, নীতিনির্ধারকদের অজ্ঞতার কারণে ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনে’ বায়োকেমিস্টদের প্রতি অবজ্ঞা ও  চিকিৎসকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অথচ রোগনির্ণয়ের কিছু কাজ আছে, সেগুলো শুধু বায়োকেমিস্টরাই করতে পারেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের’ ধারা ৯-এর ৪ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ‘সব ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি রিপোর্টে বিএমডিসি রেজিস্টার্ড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্বাক্ষর থাকতে হবে।’ এই ধারা বৈষম্যমূলক, অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই দুটি ধারা সংযোজিত হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে ল্যাবরেটরিতে রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ভুল এবং পরে তা থেকে রোগের চিকিৎসায় ঝুঁকি ও ক্ষতি দেখা দিতে পারে।  

অনলাইনে আলোচনায় যুক্ত হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিটিকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

আয়োজকদের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন থেকে বিতর্কিত ধারা বাদ, বায়োকেমিস্টদের জন্য নীতিমালা তৈরি, সব ল্যাবরেটরিকে অ্যাক্রিডিটেশনের আওতায় আনা, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে বায়োকেমিস্ট ও ল্যাবরেটরি সায়েন্টিস্ট নিয়োগ, জেলা পর্যায়ে এ ধরনের পদ সৃষ্টি, নীতিনির্ধারণে প্রাণরসায়নবিদ অন্তর্ভুক্ত করা এবং অর্গানোগ্রামের মাধ্যমে পদোন্নতির পথ খোলা রাখা।

সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে জুম সংযোগে দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমান। আলোচনায় অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য  (প্রশাসন) ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ড. সোহেল আহমেদ, বিএসিবির আহ্বায়ক মো. মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শফিকুর রহমান, সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক ও ড. আব্দুল মোত্তালিব। 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত