শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

সফল কৃষি উদ্যোক্তা আজিম

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১১ এএম

নাটোরের গুরুদাসপুরের কৃষি উদ্যোক্তা আজিম উদ্দিন কেঁচো সার তৈরি ও মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বাণিজ্যিকভাবে এখন তার ফার্মে কেঁচো কম্পোস্ট সার ও মাশরুম বিক্রি হচ্ছে। গুরুদাসপুর উপজেলা সদরের বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজের পাশে আজিম উদ্দিনের কেঁচো সারের খামার। তার তৈরি সার জমিতে ব্যবহার করে এলাকার কৃষক বিষমুক্ত ফসল ও সবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন। এ ছাড়া কৃষি অফিসের পরামর্শে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে মাটির গুণাগুণ ঠিক রাখতে কৃষকরা আজিমের উৎপাদিত কেঁচো সার ব্যাপকভাবে ব্যবহারে ঝুঁকে পড়েছেন।

খামারনাচঁকৈড় মহল্লার কৃষি উদ্যোক্তা আজিম উদ্দিন শেখ ২০২২ সালে কৃষি অফিসের পরামর্শে তার আবাদ করা জমিতে ব্যবহারের জন্য সীমিত পরিসরে কেঁচো সার তৈরির উদ্যোগ নেন। বগুড়া থেকে থাইল্যান্ডের কেঁচো ক্রয় করে প্রথমে অল্প করে শুরু করেছিলেন। তবে স্থানীয়ভাবে গোবর ও কেঁচোর সমন্বয়ে এ সার তৈরি করতে প্রথম দিকে নানা সমালোচনা শুনতে হয়েছে। এরপর তার খামারে উৎপাদিত কেঁচো সার নিজ জমিতে ব্যবহারের পর ফলন ভালো পাওয়ায় আশপাশের কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হন। তখন থেকে জৈব সারের চাহিদা বাড়তে থাকায় ২০২৩ সালে এসে বাণিজ্যিকভাবে সার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থের ৩টি চ্যানেল হাউজ, ৩০টি চাড়ি দিয়ে তৈরি শুরু করেন। স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে গোবর ও বগুড়া থেকে থাইল্যান্ডের কেঁচো সংগ্রহ করে শুরু করেন কেঁচো সার তৈরি। পাশাপাশি গোবর, চা-পাতি, খৈল, মুরগির বিষ্টা, ছাই, কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করছেন টাইকো সার। দেড় লাখ টাকা খরচ করে বড় একটি ঘর তৈরি করেছিলেন তিনি। পরে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে আরেকটি ঘর তাকে তৈরি করে দেওয়া হয়। প্রতিদিন কেঁচো (ভার্মি কম্পোস্ট) সার ও টাইকো সার উৎপাদন হচ্ছে ১৭০-২০০ কেজি। প্রতি কেজি ১৬ টাকা করে বিক্রি করছেন । মাস শেষে খরচ বাদ দিয়ে তার আয় হয় প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা।

কৃষি উদ্যোক্তা আজিম উদ্দিন শেখ জৈব সার তৈরির পাশাপাশি মাশরুম চাষেও সফল হয়েছেন। জৈব সার খামারের পাশেই তার ‘আমবিয়া মাশরুম ফার্ম’। দুই বছর আর্গে ঢাকা সাভার থেকে মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে মাত্র ২০টি মাশরুম বেড তৈরির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে তার ফার্মে রয়েছে প্রায় এক হাজার মাশরুম বেড। বেড তৈরির ১৫-২০ দিনের মধ্যে মাশরুম উৎপাদন হয়। প্রতিদিন ৩-৪ কেজি মাশরুম উত্তোলন করেন তিনি। প্রতি কেজি মাশরুমের বিক্রি করেন ৩৫০-৪০০ টাকা। মাসে আয় হয় প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে ছাড়াও তার ফার্ম থেকে মাশরুম কিনছেন স্টিট ফুডের দোকানগুলো।

আজিম উদ্দিন শেখ আরও জানান, ‘শুরুর সময়টা তার জন্য অনেক কঠিন ছিল। তবে এখন সে অনেক স্বাবলম্বী। কেঁচো সার ও মাশরুম থেকে প্রতি মাসে তার আয় এখন ৬০-৭০ হাজার টাকা। নিজের জমিতে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন সবজি চাষ করতে তিনি। কৃষি অফিসের পরামর্শে এসব শুরু করে এখন তিনি সফল। যারা বেকার রয়েছেন তাদেরও মাশরুম চাষ ও জৈব সার তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।’ গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হারুনর রশিদ জানান, ‘দিন দিন রাসায়নিক সার ব্যবহার বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ফলন ভালো হলেও গুণগতমান কমে যাচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্ভাবনাও রয়েছে। জৈব সারকে মাটির প্রাণ বলা হয়। আজিম উদ্দিন শেখ জৈব সার তৈরির আগ্রহ দেখানোর কারণে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ছাড়াও মাশরুম চাষ করার জন্য কৃষি অফিস থেকে একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। মাশরুম সুপার ফুড হিসেবে জনপ্রিয়। অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপকারি। মাশরুম বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। আজিম উদ্দিনকে দেখে অনেকেই মাশরুম ও জৈব সার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। সবাইকে কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত