শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করতেন যুবলীগ নেতা

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৬ এএম

রাজধানীর ধানমন্ডিও মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত জানুয়ারি মাসে ‘একই কায়দায়’ পামওয়েল ও সয়াবিন তেলবোঝাই দুইটি ট্রাক ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে এই চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। ডিবি বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা তেলবোঝাই দুইটি ট্রাক মুন্সিগঞ্জের একটি কারখানায় রাখেন। সেখানে ৩০ লাখ টাকার সয়াবিন তেল ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন ডাকাত দলের সদস্যরা।

পুলিশ বলছে, গত এক সপ্তাহ ধরে অভিযান চালিয়ে মো. মঞ্জু (৪০), সাইফুল ইসলাম (৪০), মো. রাসেল (২৮), মো. জাহিদ (২৪), মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদ (৪০), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৩), মো. হিরা শেখ (৩৫), মো. রফিক (৩৫), মো. বাধন (৩০), চাঁন মিয়া (৫৪), বেল্লাল চাকলাদার (৪৫) ও মো. আসলাম খাঁনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়ে ১৯০০ কেজি সয়াবিন তেল, দুটি ট্রাক ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।

গতকাল সোমবার দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে বেলাল চাকলাদার মতিঝিল ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি ও উত্তরা পশ্চিম থানায় আরেকটি হত্যা মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির আড়ালে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিসি মাসুদ আলম বলেন, আব্দুল কাদের নামে এক ট্রাক ব্যবসায়ীর চারটি ট্রাক আছে। গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার ট্রাক ড্রাইভার মো. নয়ন ও হেলপার মো. জামিরুল ইসলাম পামওয়েল বোঝাই ৬০টি ড্রাম একটি ট্রাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উদ্দেশ্যে রওনা করে। ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে ধানমন্ডি মডেল থানাধীন মিরপুর রোডের ‘হোটেল আড্ডার’ সামনে ৭-৮ জনের একটি দল দুটি মাইক্রোবাসে করে এসে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সিগন্যাল দিয়ে ট্রাকটি আটকায়। তাদের দুজন লেজার লাইট ও ওয়াকিটকিসহ সাদা পোশাকে নেমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ট্রাকের কাগজপত্র দেখতে চায়। একপর্যায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে ড্রাইভার হেলপারসহ তেলবাহী ট্রাকটি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায় তারা। পরে ড্রাইভার ও হেলপারকে চেতনানাশক ওষুধ সেবন করিয়ে হাত ও চোখ বেঁধে কেরানীগঞ্জের রসুলপুর এলাকায় ফেলে দেয়। ওই ঘটনার পর ট্রাক ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের গত ৭ জানুয়ারি অজ্ঞাতপরিচয় সাত-আটজনকে আসামি করে ধানম-ি থানায় একটি মামলা করেন।

এর ১৯ দিন পর গত ২২ জানুয়ারি রাত ৩টার দিকে একই সড়কের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ গেটের সামনে ‘একই কায়দায়’ আরেকটি তেলবোঝাই ট্রাক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সেদিনও ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেল ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে নিয়ে যায়, যে ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়।

একই কায়দায় ডাকাতির ঘটনার তদন্তে জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, রাসেল ও জাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত রবিবার ডাকাতির মূল হোতা মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এক এক করে এই চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিসি মাসুদ আলম বলেন, গ্রেপ্তার জাকির ওরফে তৌহিদ ডাকাত দলের প্রধান। তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া জাহিদের বিরুদ্ধে আটটি, হিরা শেখ ও রফিকের বিরুদ্ধে ছয়টি করে, মঞ্জুর বিরুদ্ধে পাঁচটি, চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি ও বেল্লাল চাকলাদারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে।

উপকমিশনার মাসুদ বলেন, এই চক্রটি কোনো জায়গায় ডাকাতির আগে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একত্রিত হয়। তারা ডাকাতির সময় সাধারণত বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, ডাকাতি শেষে মোবাইল ফোন সীমসহ ফেলে দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যেতেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত