মহান আল্লাহ আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। পৃথিবী হচ্ছে দুঃখ-কষ্টের স্থান। কষ্টের অন্যতম দিক হলো রোগ-ব্যাধি। মানব জীবনে রোগ-শোক নিত্যকার ঘটনা। রোগ মানবজীবনের এমন এক দিক, যাতে আক্রান্ত হয়ে অহংকারী ব্যক্তিও শক্তিহীন হয়ে যায়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য পরীক্ষা। যাতে মানুষ রোগ-শোকে নিজের অসহায়ত্ব অনুভব করতে পারে এবং মহান আরোগ্যদাতা আল্লাহর দরবারে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে নিজেকে তারই কাছে সোপর্দ করে।
মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়-ভীতি, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফসলের স্বল্পতা দ্বারা। (হে রাসুল!) আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।’ (সুরা বাকারা ১৫৫) অনেক মুফাসসিরের মতে আয়াতে বর্ণিত ‘জীবনের স্বল্পতা’ দ্বারা উদ্দেশ্য রোগ।
হজরত আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এক দিন সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, যদি কোনো মুমিনের রোগ হয় অতঃপর আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করেন, তবে এটি তার জন্য পূর্ববর্তী গুনাহের কাফফারা হয়। (আবু দাউদ) অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ওই মুমিনের ওপর আমি আশ্চর্য হই যে রোগের প্রতি বিরক্ত ও বিতৃষ্ণ হয়। সে যদি জানত রোগের মধ্যে কী রয়েছে তবে সে আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো জীবনটাই রোগাক্রান্ত থাকাটা নিজের জন্য আবশ্যক করে নিত। (মুসনাদে বাজজার)
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে কষ্টে ফেলেন। (মুয়াত্তা মালেক) এ কল্যাণ বিভিন্নভাবে হতে পারে। আতা ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো মানুষ রোগে আক্রান্ত হয় তখন আল্লাহতায়ালা তার কাছে এ নির্দেশ সহকারে দুজন ফেরেশতা পাঠান যে, দেখ সে তার সেবাকারীর কাছে কী বলছে? যদি ওই ব্যক্তি অসুস্থ হওয়ার পরও আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করতে থাকে তবে সে খবর ফেরেশতাদ্বয় আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়। তখন আল্লাহ বলেন, আমি যদি তাকে মৃত্যু দেই তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব আর যদি তাকে রোগ থেকে মুক্তি দিই তবে তার গুনাহ ক্ষমা করে দেব। (মুয়াত্তা মালেক) অতএব বোঝা গেল, রোগ মানুষের জন্য কল্যাণ নিয়ে আসে, চাই তা দুনিয়ার কল্যাণ হোক বা পরকালের কল্যাণ। এ সম্পর্কে আল্লাহর চিরন্তন নীতি হলো, ‘নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে, নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে। (সুরা ইনশিরাহ ৫-৬)
মুমিন ব্যক্তি কোনো রোগে আক্রান্ত হলে রোগাক্রান্ত হওয়ার কষ্টটা তার পূর্বের গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যায়। অর্থাৎ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মুমিনের পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়। এ সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তি কোনো দুঃখ-কষ্ট, ক্লান্তি, রোগ, চিন্তা বা ক্ষুদ্রতর ব্যথা অনুভব করলে সেটার মাধ্যমে তার পাপ দূর হয়। (সহিহ বুখারি) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিনের গায়ে কাটা বিঁধলেও সেটার ওসিলায় তার গুনাহ মাফ করা হয়। (মুয়াত্তা মালেক)
রোগের যন্ত্রণায় অতিষ্ট না হয়ে যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ তাকে উত্তম পুরস্কার দান করেন। একাধিক হাদিসে রাসুল (সা.) রোগকে জান্নাত লাভের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আতা ইবনে আবি রাবাহ (রা.) বলেন, একবার আমাকে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, আমি কি আপনাকে এক জান্নাতি মহিলাকে দেখাব? আমি বললাম অবশ্যই। তিনি বললেন, ওই কালো মহিলাকে দেখুন। ওই মহিলা একদিন রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মৃগী রোগের চাপ শুরু হলে কোনো কোনো সময় আমার সতর খুলে যায়। তাই আমার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করুন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে ধৈর্যধারণ করতে পার। তাহলে জান্নাত লাভ করতে পারবে। আর যদি চাও তবে আমি তোমার রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করব। তখন মহিলাটি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ধৈর্যধারণ করব। তবে আমার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করুন যেন আমার সতর খুলে না যায়। তখন রাসুল (সা.) তার জন্য সেই দোয়া করলেন। (সহিহ বুখারি)