শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ঢাকা থেকে শুরু যে আসরের

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩২ এএম

নব্বইয়ের দশকে এখনকার মতো অর্থবিত্তে এতটা সমৃদ্ধ সংগঠন ছিল না ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। অন্যদিকে ফিফা অনেক বেশি মজবুত সাংগঠনিক কাঠামোর বলে ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের আনাচে-কানাচে। ওই সময় আইসিসি সভাপতির মসনদে ছিলেন জগমোহন ডালমিয়া। বাংলাদেশের ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে যিনি ‘পরম বন্ধু’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আছেন নানা কারণে। তার একটি প্রধান কারণ এই আজকের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ১৯৯৮ সালে যেটি শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতেই। ডালমিয়া চেয়েছিলেন আইসিসির তহবিলকে আরও সমৃদ্ধ করতে, পাশাপাশি সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে খেলাটিকে আরও ছড়িয়ে দিতে। এই ভাবনা থেকেই উদয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফির। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি আসরটির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের মাটিতে যার নবম আসর গড়াতে যাচ্ছে দীর্ঘ আট বছর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে।

ওই সময় চার বছর পরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপই ছিল আইসিসির সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। এর মধ্যে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনা করে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। শুরুতে যার নাম ছিল আইসিসি নকআউট ট্রফি। বিশ্বকাপের মর্যাদা কোনোভাবেই যেন কমে না যায়, তা নিশ্চিত করতে নকআউট পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়েছিল বলেই এসেছে এ নাম। স্পন্সরশিপের কারণে যেটাকে উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ বলেও সম্বোধিত করা হয়। আর উইজডেন এ প্রতিযোগিতাটির নামকরণ করেছিল ‘মিনি বিশ্বকাপ’। তৃতীয় আসরে গিয়ে বদল আসে নামে। তখন থেকেই এর নাম ‘আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি’। প্রথম দিকে শুধু টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো খেলার সুযোগ পেত। এরপর ১০টি পূর্ণ সদস্য দেশ ও আরও দুটি সহযোগী দেশ অংশ নিয়েছে এই প্রতিযোগিতায়। ২০০৮ সাল থেকে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। টুর্নামেন্ট শুরুর নির্দিষ্ট সময় আগে শুধু ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা আটটি দল সুযোগ পায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার। আট দলকে দুটো গ্রুপে ভাগ করে গ্রুপ পর্ব, এরপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। এবারের আসরে প্রতিযোগিতার লোগো বদল হলেও খেলা পরিচালিত হবে এই কাঠামোতেই।

বাংলাদেশে ১৯৯৮ আসর

১৯৯৮ সালে আইসিসি নকআউট ট্রফির প্রথম আসর বসার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা (ডিজনিল্যান্ড) কিংবা আরব আমিরাতের শারজায়। কিন্তু জুন-জুলাইতে হঠাৎ করে প্রথম আসরের আয়োজক নির্বাচন করা হয় বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ টেস্ট খেলুড়ে দেশ না হওয়ায় এই মর্যাদাসম্পন্ন ৯টি দেশকে নিয়েই আয়োজন চালানোর পরিকল্পনা করা হয়। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় হুমকির মুখে পড়েছিল আয়োজন। প্রতিকূলতা কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২৪ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর, ৯ দিনের এ মহাযজ্ঞ সফলভাবে সম্পন্ন হয়। মাঠের খেলায় না থাকলেও দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় আর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল এ টুর্নামেন্টের। আইসিসি ও অংশ নেওয়া ৯ দেশের তথা ক্রিকেট বিশ্বের কাছে সফল আয়োজক হিসেবে প্রশংসা কুড়ায় বাংলাদেশ। এর ঠিক দুবছর পরেই টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই আসর থেকে উপার্জিত টাকার ১০ শতাংশ বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জমা দেয়। ১ নভেম্বরের দিবারাত্রির ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৯ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রানের বেশি করতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। ৩ রানের দারুণ এক জয়ে আইসিসি নকআউট ট্রফির প্রথম আসরের শিরোপা জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা, যা এখনো পর্যন্ত দেশটির সিনিয়র টিমের একমাত্র আইসিসি শিরোপা। কিংবদন্তি জ্যাক কালিস হন আসরের সেরা ক্রিকেটার। আইসিসি প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করে এ আসর দিয়ে।

কেনিয়ায় ২০০০ আসর

বাংলাদেশে এ প্রতিযোগিতার সফল আয়োজনে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরের আসর ২০০০ সালে বসে কেনিয়ার নাইরোবিতে। প্রথমবারের মতো এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশসহ ১০ টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় আয়োজন কেনিয়াও। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের পথচলা। কেনিয়াও বাদ পড়ে একই ব্যবধানে ভারতের কাছে হেরে। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে মুখোমুখি হয় নিউজিল্যান্ড ও ভারত। ১৫ অক্টোবর নাইরোবি জিমখানায় ভারতের দেওয়া ২৬৫ রানের লক্ষ্য ৪ উইকেট হাতে রেখে ছুঁয়ে দ্বিতীয় আসরের শিরোপা উঁচিয়ে ধরে নিউজিল্যান্ড। এ আসরে ফাইনালে সেঞ্চুরিসহ সর্বোচ্চ ৩৪৮ রান করেন সৌরভ গাঙ্গুলী। তবে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিতে ফাইনালসেরা হয়েছিলেন ক্রিস কেয়ার্নস। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো টুর্নামেন্টের আয়োজক হয়ে কেনিয়ার ক্রিকেটে লাগে উন্নতির বাতাস। ২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলা যার জ¦লন্ত উদাহরণ।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত