সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

বাটলার প্রশ্নের ঊধ্বে

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৬ এএম

গর্হিত অপরাধ করেছেন নারী ফুটবলাররা! গত বছর অক্টোবরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালে ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের নির্দেশনা মানেননি। কোচের একাদশকে ভুল প্রমাণ করে সাজিয়েছেন নিজেদের পছন্দসই একাদশ। টুর্নামেন্টের মাঝপথে কোচকে পুতুল বানিয়ে বাকিটা পাড়ি দিয়েছেন নিজেরাই। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের নজির সৃষ্টি করেছেন সাবিনা খাতুনরা। তারপরও একবার ভাবুন তো? মেয়েরা বিদ্রোহী হয়ে না উঠলে কি হিমালয়ে আরেকবার ফুটত লাল-সবুজ ফুল? টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ শিরোপা কি আসত ঘরে?

কোচের অঙ্কে যে ভুল ছিল, সেটা সাফের প্রথম ম্যাচেই প্রমাণিত। দুর্বল পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি খেলাননি দুই পরীক্ষিত ফুটবলারকে। তাতেই টালমাটাল দল শুরুতে গোল হজম করে বসে। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে শামসুন্নাহার জুনিয়র কোনোমতে এক গোল শোধ করে এনে দেন গুরুত্বপূর্ণ এক পয়েন্ট। সেই ম্যাচের শুরুর একাদশে ছিলেন না মিডফিল্ডার মারিয়া মান্ডা ও মাসুরা পারভীন। এই দুজনের শূন্যতা প্রতিটা মুহূর্ত টের পেয়েছেন শুরুর একাদশে খেলা ফুটবলাররা। ম্যাচ চলাকালে সাবিনাদের অনুরোধে কর্ণপাত করেননি কোচ। পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনোমতে হার এড়ানোর পর তাই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ফুটবলাররা। কোচ যে সিনিয়র কয়েকজনকে দেখতে পারেন না, সেই অভিযোগ তোলেন মনিকা চাকমা। এরপর অন্যরাও কোচের নানা অপকর্মের বিষয় সামনে আনতে থাকেন। কোচও কম যান না। ইচ্ছেমতো সংবাদমাধ্যমে ফুটবলারদের বদনাম করেন পুরো আসর জুড়েই। এমনকি বাঁচা-মরার ভারত ম্যাচের আগেও মেয়েদের মানসিক চাপে রেখেছেন। মেয়েরা তাদের ইচ্ছেমতো একাদশ নিয়ে কিছু করতে পারবে না এমন কথাও বলেছিলেন কোচ। এসব কিছুর যোগফলে পাহাড় সমান চাপ নিয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামে বাংলাদেশ। তবে মাঠে তারা সত্যিকারের বাঘিনী রূপ ধারণ করেন এবং ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপসেরা হয়। পরে ভুটানকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে ফাইনালে যায় দল, আর ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নিজের দখলে নেয়।

সাফ সাফল্য পাওয়ার আগেই এই কোচকে নিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন ফুটবলাররা। সাফে বিরোধটা প্রকাশ্যে আসে বাজেভাবে। এরপরও বাটলারকে দাঁড়াতে হয়নি কাঠগড়ায়। নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার মেয়েদের সব অভিযোগ এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন বারবার। গুরুত্বই দেননি। বরং বাটলারকেই কোচ করার ব্যাপারে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তারই পরিণতি বর্তমানের এই অচলাবস্থা। ১৮ ফুটবলার বাটলারকে বয়কট করেছেন। সমস্যা সমাধানে বাফুফে তড়িঘড়ি গঠন করেছিল সাত সদস্যের বিশেষ কমিটি। সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসান নেতৃত্বাধীন সেই কমিটি ১৮ ফুটবলার ও অভিযুক্ত কোচের শুনানি করে প্রতিবেদন দিয়েছে বাফুফে সভাপতির হাতে। সেই ফাইল তাবিথ আউয়াল এখনো প্রকাশ করেননি। তার আলোকে কোনো সিদ্ধান্তও নেননি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে বাফুফে সভাপতি আন্দোলনে থাকা মেয়েদের অনুশীলনে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই মুখে কিছু না বললেও মেয়েদের ওপর বিরক্তিটা ঝাড়ছেন ভিন্ন পন্থায়। ১৮ জনকে ক্যাম্পে থাকার সুযোগ দিয়েছেন, তবে তাদের বাদ দিয়েই বাটলারকে দিয়ে বাফুফে গড়ে তুলছেন নতুন জাতীয় দল। যে দলের এই মাসের শেষে আরব আমিরাত যাওয়ার কথা দুই ম্যাচ খেলার জন্য। ১৮ জনকে বাদ দিয়ে সাম্প্রতিক ৩৬ জুনিয়র খেলোয়াড়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তিও সেরে ফেলেছে বাফুফে।

এদিকে বিশেষ কমিটির কর্মকা- চলাবস্থায় মেয়েদের নিয়ে বিষোদগার করেছিলেন বাটলার। এই মেয়েদের কয়েকজন থাকলে, তিনি থাকবেন না, এমন কথাও বলেছেন। নৈতিকভাবে যেটা তিনি করতে পারেন না। যে মেয়েদের সরাতে উঠেপড়ে লেগেছেন বাটলার, আদতে সেই সাবিনা-ঋতুপর্ণা-তহুরারাই তাকে বানিয়েছেন সফল কোচ। তাই তার চাকরি নবায়ন হয়েছে। শুরু থেকেই বাফুফের আশকারা পেয়ে আসা এই কোচ এবারও বেঁচে গেলেন। তদন্ত চলাকালে কটূক্তি করার পরও তার কাছে ব্যাখ্যা চায়নি বাফুফে।

বাটলারের ক্যারিয়ার জুড়েই বিতর্ক আর বিতর্ক। যেখানে, যে দেশেই কাজ করেছেন শিরোনাম হয়েছেন কোনো না কোনো বিতর্কিত কাজ বা কথার জন্য। তারপরও বাফুফে বুঁদ হয়ে আছে বাটলারে। তাই প্রশ্ন জাগে বাটলার কেন সব জবাবদিহির ঊর্ধ্বে? নাকি বাটলারের সাত খুন মাফ অন্য কোনো রহস্যময় কারণে? সেটাই বা খতিয়ে দেখবে কে? দেখার তাগিদ যে নেই কারও মধ্যে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত