রাজধানীর শাহবাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনরতদের গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও লাঠিপেটা ও জলকামানের পানি নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। নিয়োগ পুনর্বহালের দাবিতে চলা আন্দোলনের অষ্টম দিনে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তারা। এর আগেও সোম ও শুক্রবার অবরোধ করে লাঠিপেটার শিকার হন তারা।
জানা গেছে, দুপুর ১টার দিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া কয়েকশ চাকরিপ্রত্যাশী শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এতে ওই এলাকায় যানজট লেগে যায়। প্রথমে পুলিশ তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করে। পরে দুপুর ২টার দিকে পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছিটিয়ে ও ধাওয়া দিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। আটক করা হয় অন্তত ১৪ আন্দোলনকারীকে। এরপর রাস্তায় যান চলাচল শুরু হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এর আগে সকাল ৯টা থেকে সুপারিশপ্রাপ্তরা শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান নেওয়া শুরু করেন। এই সময় তারা ‘সুপারিশপ্রাপ্ত করছে কে, এই সরকার এই সরকার,’ ‘আমি কে, তুমি কে, শিক্ষক শিক্ষক’, ‘প্রথম ধাপ চাকরি করে, আমরা কেন রাজপথে’ ইত্যাদি সেøাগান দেন। এ ছাড়া তারা ‘হয়তো মোদের যোগদান নিন, নয়তো মোদের জীবন নিন’, ‘হয় নিয়োগ, নয় মৃত্যু’সহ নানা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এরপর দুপুর ১টার দিকে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এর কিছুক্ষণ পর লাঠিচার্জ এবং জলকামান ছিটানো হলে সোয়া ২টার দিকে তারা মোড় ছেড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। ছত্রভঙ্গ করার সময় একাধিক আন্দোলনকারীকে আটক করতে দেখা যায় পুলিশকে।
আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘আমরা মেধা দিয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। পুলিশ ভ্যারিফাই করেই আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কেন আন্দোলন করতে হবে। আমাদের দাবি মানতে হবে। আমরা সাত দিন ধরে একটি যৌক্তিক দাবির জন্য আন্দোলন করছি। কোনো উপদেষ্টা কথা বলছেন না। আমরা কি এ দেশের নাগরিক নই? আমরাতো আন্দোলনের সময় ছাত্রদের পাশে ছিলাম। এখন আমাদের পাশে ছাত্র প্রতিনিধি নেই কেন? গত ৩১ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ৫৩১ জন। এরপর কোটা অনুসরণ করে এই ফল প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগ বঞ্চিত ৩০ প্রার্থী একটি রিট মামলা করেন। পরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ বাতিল করে হাইকোর্ট। রায়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন তৃতীয় ধাপের সুপারিশপ্রাপ্তরা। ফলে এ নিয়ে টানা অষ্টম দিনের মতো আন্দোলন করছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা। তাদের দাবি, হাইকোর্টের এ রায় বাতিল করে তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
এদিকে, বৃহস্পতিবারের তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পর বিকেলে আন্দোলনকারী জান্নাতুন নাঈম সুইটি, সামিয়া আক্তার এবং নওরীন আক্তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ এবং আটকের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা সরকারের কাছে আলটিমেটাম দিয়েছেন, দাবি না আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান তারা স্থল ত্যাগ করবেন না এবং দাবি আদায় না হলে তারা রাজপথে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া রোববারের মধ্যেই তাদের যোগদান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন, নয়তো তারা মহাসমাবেশ করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খালেদ মনসুর বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এ সময় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।