যুগের সঙ্গে ফ্ল্যাটের দামের পার্থক্য হলেও নগরীতে জায়গার বদল হয়নি। অর্থাৎ দুই যুগ আগেও যে এলাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা ছিল, এখনো সেসব এলাকাতেই নির্মিত হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকায় ফ্ল্যাট নির্মিত হচ্ছে না। আগামীতেও এই ধারণার কোনো পরিবর্তন হবে না।
চট্টগ্রামে চার দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ারে নাজমুন নাহার নামের এক নারী এসেছেন। মেলায় প্রবেশ করেই তিনি হাতের বাম পাশে জুমাইরা হোল্ডিংসের স্টলে গিয়ে ফ্ল্যাট নিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে থেকে এই প্রতিবেদক শুনতে পান, তিনি জানতে চাইছেন নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় কোনো ফ্ল্যাট আছে কি না। জুমাইরা হোল্ডিংসের সিনিয়র ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলছেন, ‘ম্যাডাম নাসিরাবাদ হাউজিং এলাকায় আমাদের কোনো ফ্ল্যাট নেই।’ কিন্তু ওই নারী নাসিরাবাদেই ফ্ল্যাট নিতে চাইছেন। এ বিষয়ে পরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় শফিকুল ইসলামের।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক গ্রাহক আসছেন নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, ওআর নিজাম রোড, খুলশী, চকবাজার, জামালখান, পাঁচলাইশ এলাকায় ফ্ল্যাটের জন্য। নগরবাসীর চাহিদাও এসব এলাকাকে ঘিরে।’
গ্রাহকের চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে না কেন প্রশ্নের উত্তর জানতে রিহ্যাব ফেয়ারে আসা একাধিক দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাতায়াত ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, শপিং মল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা বিবেচনা করে ওআর নিজাম রোড, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, জামালখান ও চকবাজার খুবই আদর্শ এলাকা। আর খুলশী উচ্চবিত্তের জন্য আবাসিক এলাকা হলেও খুলশীর বিপরীতে নাসিরাবাদ প্রপার্টিজেও অনেকে ফ্ল্যাট কিনছেন।
খুলশীতে নাসিরাবাদ প্রপার্টিজ নগরবাসীর চাহিদার নতুন জায়গা। একসময়ের পাহাড়ি এলাকায় প্রথম প্রকল্প নিয়ে এসেছিল এপিক প্রপার্টিজ। এ বিষয়ে এপিক প্রপার্টিজের পরিচালক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নাসিরাবাদ প্রপার্টিজে আমরা নগরবাসীকে খুলশীতে বসবাস করার স্বাদ দিচ্ছি। এখানে পাহাড় চূড়ায় এপিক ক্রাউন রিজ-১, ২ ও ৩ টাওয়ারে আমরা ৯২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছি। এই এলাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা রয়েছে।’ এপিকের পর আরও অনেক ডেভেলপার এই এলাকায় প্রকল্প নিয়েছে।
তবে স্থান নির্বাচনে নগরবাসীর পছন্দের জায়গার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর এই পরিবর্তন না হওয়ায় জিইসি, জামালখান ও চকবাজার-কেন্দ্রিক প্রকল্প বাড়ছে বলে বিভিন্ন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা জানান। এ বিষয়ে কথা হয় ইকুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান আইনুল হকের সঙ্গে।
তিনি আরও বলেন, ‘নগরীর অন্যান্য এলাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা নেই। অন্য এলাকায় বিনিয়োগ করে ফ্ল্যাট বিক্রি করা যাবে না। তাই ওআর নিজাম রোড, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, জামালখান ও চকবাজার এলাকায় ডেভেলপাররা বেশি প্রকল্প নিয়ে থাকেন।’
দীর্ঘ দুই যুগেও নতুন নতুন এলাকা প্রকল্প নেওয়ার জন্য গড়ে ওঠেনি কেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ফিনলে প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমআই খসরু বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধাগুলো এসব এলাকায় বেশি। তাই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি থাকায় ডেভেলপাররাও প্রকল্প গ্রহণে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন এসব এলাকা।
আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা কিংবা হালিশহর এলাকায় কেন প্রকল্প নেওয়া হয় না। এই প্রশ্নের জবাবে এম আই খসরু বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে আগ্রাবাদ সিডিএ ও হালিশহর এলাকায় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে গতকাল থেকে নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল র্যাডিসনে শুরু হওয়া চার দিনের রিহ্যাব ফেয়ারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনও বলেছেন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যার কথা। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করতে সবাইকে ভবনের চারপাশে জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে। প্লটের পুরো জায়গা পাকা করা যাবে না। এতে পানি মাটির নিচে রিচার্জ হবে এবং ভূগর্ভস্থ পানির ধারণক্ষমতা বাড়বে।
একই সময় তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্লোর শিশুদের খেলার জন্য খালি রাখতে হবে। এতে শিশুরা খেলার জায়গা পাবে। আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ সচল করার চেষ্টা করছি।’