শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

দ্যুতি ছড়াচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদ

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৮ এএম

হুমায়ূন আহমেদ বাংলার সাহিত্য অঙ্গনে এক চিরস্মরণীয় নাম। ২০১২ সালে মৃত্যুর পর ১৩ বছর পেরোলেও তাকে ভোলেনি বাংলার সাহিত্যপ্রেমীরা। তার অনবদ্য সাহিত্যকর্ম দিয়ে সাহিত্যানুরাগীদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তাই তো মৃত্যুর দশক পেরিয়ে গেলেও তার বই থাকে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায়। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রতি বেশ আগ্রহী। মৃত্যুর পরও আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন এই দেশসেরা লেখক।

গতকাল বৃহস্পতিবার বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে গিয়েও এই চিত্র লক্ষ করা যায়। বইমেলার ১৩তম দিনে হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিত বইয়ের স্টলগুলোয় দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় লক্ষ করা যায়। দেখে মনে হচ্ছিল হুমায়ূন আহমেদ স্টলে দাঁড়িয়ে তার ভক্তদের অটোগ্রাফ-সংবলিত বই দিচ্ছেন আর ক্রেতারা তা আনন্দের সঙ্গে কিনছেন।

বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্টল, প্যাভিলিয়ন ঘুরে বইপ্রেমীরা পছন্দের বই কিনছেন। এবারের বইমেলায় অন্যপ্রকাশ, অনুপম, অনন্যা, অন্বেষা ও কাকলী এই পাঁচটি প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো। এর সব প্যাভিলিয়নেই তরুণ-তরুণীদের কমবেশি ভিড় দেখা যায়। বিভিন্ন বয়সী হুমায়ূনপ্রেমীরা বই দেখছেন ও পছন্দের বই সংগ্রহ করছেন। অন্যান্য লেখকের চেয়ে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের বিক্রি বেশি বলেও জানান স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীরা।

বইমেলা ঘুরতেই অনন্যা প্রকাশনীর সামনে একটা ছোট জটলা দেখা যায়। তারা সবাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বইমেলা ঘুরতে এসেছেন বলে জানান। কী বই কিনতে এসেছেন জানতে চাইলে তারা সবাই হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত বলে দাবি করেন। তারা জানান, হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতেই বইমেলায় এসেছেন।

তাদের মধ্যে থাকা সুমনা আক্তার নামের একজন বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই হিমু পড়ার মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত হয়েছি। পরে মিসির আলি, অপেক্ষা উপন্যাস, মানুষ, কে কথা কয়সহ অন্য বইগুলোও পড়েছি। হুমায়ূন স্যারের বই মানেই আমার কাছে ভিন্ন কিছু।’

বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান ফারুক বলেন, ‘এমন কতদিন আর কত রাত পার করেছি হুমায়ূন স্যারের বই পড়ে। একটা বই পড়া শুরু করলে তা আর শেষ না করে উঠতে পারতাম না। স্যার মৃত্যুবরণ করেছেন কিন্তু তার বইগুলো তাকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন। নতুন অনেক লেখক আসবেন কিন্তু হুমায়ূন স্যারের মতো কেউ আসবেন না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের নারী শিক্ষার্থী ফারহানা জানান, তিনি ছোট থেকেই হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত ও নিয়মিত পাঠক। হুমায়ূন আহমেদের সব বই পিডিএফ পড়লেও, বইমেলা থেকে বই কিনে পড়া হয়নি বলেই এবারের মেলায় তিনি এসেছেন।

উদয়ন স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া পাঁচজন শিক্ষার্থীকে দেখা যায় হুমায়ূন আহমেদের বই খুঁজতে। তাদের দুজন হিমু, বাকি তিনজন মিসির আলির ভক্ত। তারা জানান, হিমু ও মিসির আলি পড়তে বসলে রাত পেরিয়ে যায়। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার কথা আর মনে থাকে না।

অনন্যা প্রকাশনীর দুজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘আমাদের স্টলে সব সময়ই বিক্রি ভালো থাকে। দিন যত গড়াচ্ছে, বিক্রিও বাড়ছে। হুমায়ূন আহমেদ, আনিসুল হকের বইগুলো অনেক বেশি পাঠকপ্রিয়। হিমুসমগ্র, মিসির আলি বরাবরই মানুষের কাছে জনপ্রিয় বলে বিক্রিও ভালো হয়।’

কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মেহেদী হাসান আসিফ বলেন, ‘ইতিমধ্যেই বইমেলা বেশ জমেছে। গত বছরের তুলনায় বিক্রিও বেশ ভালোই হচ্ছে। হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো তরুণ-তরুণীরা বেশি কিনছেন। হিমু, মিসির আলিসমগ্র, গল্পসমগ্র বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

অন্যপ্রকাশের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ পাঠকপ্রিয় লেখক। আমাদের স্টল থেকে স্যারের অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা বইগুলোর চাহিদা সব সময়ই বেশি। এবারও তার বই বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশক ও স্বত্বাধিকারী নাসির আহমেদ সেলিমকে মেলার বিক্রির সার্বিক বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্যাভিলিয়নে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের বিক্রি প্রতিবছরই বেশি থাকে। এবারও এর তারতম্য হচ্ছে না। পাঠকরা আসছেন, তার বইগুলো দেখছেন ও কিনছেন। সব বয়সের মানুষ বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে আসক্ত বেশি।’ তিনি বলেন, ‘একসময় হুমায়ূন আহমেদ প্যাভিলিয়নে আসতেন। পাঠকরা তার অটোগ্রাফ-সংবলিত বই কিনতেন। কিন্তু এখন তিনি নেই, তবু মনে হয় তিনি এসেছেন, পাঠক আগ্রহ নিয়ে তার হাত থেকে বই সংগ্রহ করছেন ও তার সঙ্গে ছবি তুলছেন।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত