শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

অটোচালকদের ওপর খাঁড়ার ঘা

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৮ এএম

গ্যাস বা পেট্রোলচালিত অটোরিকশার চালকরা মিটারের থেকে বেশি ভাড়া নিয়ে আইন অমান্য করলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে। তাদের পয়েন্টও কাটা হতে পারে। সম্প্রতি এমন নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সিএনজির মিটারে ভাড়া একই আছে। গণপরিবহনের ভাড়া কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে যদিও। সিএনজির দৈনিক জমা ৯০০ টাকা নিতে চান না সিএনজিমালিকরা। সিএনজির চালকরা নতুন জরিমানার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, এটা চালকদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, বিআরটিএ থেকে ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর মালিকপক্ষকে দৈনিক ৯০০ টাকা জমা দিতে বলা হয় সিএনজিচালিত প্রত্যেক অটোরিকশার চালককে। কিন্তু সরকারনির্ধারিত এ জমার বদলে মালিকরা প্রতিটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা আদায় করে থাকে। কোনো চালক তা দিতে অনিচ্ছুক হলে তার কাছ থেকে অটোরিকশার চাবি নিয়ে নেন মালিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রথম দুই কিলোমিটারে ৪০ টাকা, পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে ১২ টাকা। বিরতিকালের জন্য ভাড়ার হার প্রতি মিনিটে ২ টাকা। আর যেকোনো দূরত্বে যাত্রী পরিবহনে বাধ্যতামূলক সর্বনিম্ন ভাড়া ৪০ টাকা করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও সিএনজি ভাড়া আর বাড়েনি। সিএনজির মালিকরা বিআরটিএর নির্দেশনা অমান্য করে বেশি জমা নিলেও বিআরটিএকে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তা ছাড়া অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা যেমন প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল এবং মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর সিএনজি বড় ধরনের যাত্রীসংকটে পড়েছে।

মো. রাকিব নামে এক সিএনজিচালক বলেন, ‘বিআরটিএ শুধু আমাদেরই ধরে। সিএনজির মালিকরা বিআরটিএ নির্দেশনা অনুযায়ী টাকা জমা রাখে না। মামলা বা জরিমানা করা হলে আগে তাদের (সিএনজিমালিক) করুক। ১০ বছর আগে আমাদের মিটারে যে ভাড়া ছিল, এখনো সেটাই আছে। এত কিছুর দাম বাড়ল কিন্তু আমাদের মিটারের রেট বাড়ল না। বিআরটিএ এ সমস্যাগুলোর সমাধান দিলে আমাদের মিটারে চালাতে সমস্যা নেই।’

যানজটের জন্য অনেক যাত্রী মিটারে যেতে চান না উল্লেখ করেন হেদায়েত উল্লাহ নামের এক সিএনজিচালক। তিনি বলেন, ‘রাজধানী জুড়ে সড়কে যানজট থাকে। এ কারণে অনেক যাত্রী মিটারে যেতে চান না। সেই যাত্রীদের কে বোঝাবে?’

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শ্রমিকদের জিম্মি করে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিকরা কোটিপতি হয়ে গেছেন। অথচ চালকদের জমার টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিআরটিএতে শুধু চেয়ারম্যান বদলায়, কিন্তু কোনো চেয়ারম্যানকেই দেখলাম না জমার টাকা নিয়ে কাজ করতে। এখন নতুন করে মিটারে চলাচলের কথা বলা হচ্ছে চালকদের। গত ১০ বছরে মিটারের ভাড়ার বদল হয়নি। গ্যাসের দাম অনেক বেড়েছে। বাজারদরের সঙ্গে মিলিয়ে মিটারের ভাড়া বদলালে চালকদের মিটারে চলতে সমস্যা নেই।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘হুট করে জনপ্রিয়তার লোভে বিআরটিএ দেখলাম মিটারে চলাচল না করলে জরিমানা ও শাস্তির কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবতা পুরো ভিন্ন। আমি অনেক জায়গায় ঘুরেছি, কোথাও মিটারে যেতে দেখিনি চালকদের। বিআরটিএর উচিত সবপক্ষকে নিয়ে বসা। সমস্যার সমাধান করা। তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।’

এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীনকে দেশ রূপান্তর থেকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত