চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার মো. জোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়াকে বদলি করা হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। বদলির আদেশ যাতে কার্যকর না হয়, সে জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পক্ষ হয়ে মাঠে নেমেছেন দুজন আইনজীবী। অপরদিকে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় তার (জোবায়ের) পদে যাকে পদায়ন করা হয়েছে, তিনিও নির্ধারিত সময়ে যোগ দেননি নতুন কর্মস্থলে।
জানা গেছে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) আলাউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক আদেশে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার মো. জোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়াকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসে বদলি আদেশ জারি করা হয়। একই আদেশে কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার শওকত জামানকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় বদলি করা হয়। আদেশে বলা হয়, ‘বদলিকৃত সার্ভেয়াররা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্যথায় আগামী ৩ ফেব্রুয়ারির আগে তাৎক্ষণিকভাবে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনস্বার্থে সার্ভেয়ার মো. জোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়াকে কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসে বদলি করা হলেও তিনি তা অমান্য করেছেন। কিছুতেই তিনি বদলি আদেশ মানছেন না। আরডিসি’র আদেশ মোতাবেক দুজন সার্ভেয়ারই এখন স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য। তারপরও তারা আইন বহির্ভূতভাবে আগের কর্মস্থলেই রয়েছেন। তবে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ শাখা) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, ‘আমরা তাকে (জোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া) রিলিজ করব। বদলির ক্ষেত্রে একটা প্রসিডিউর আছে। আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি।’
অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় বদলিকৃত সার্ভেয়ার শওকত জামানের যোগদানের বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) রয়া ত্রিপুরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা তাকে এখনো রিলিজ করিনি। বদলি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’ তবে নিজের বদলি প্রসঙ্গে সার্ভেয়ার শওকত জামান বলেন, ‘আমাকে এখনো রিলিজ দেননি এসি ল্যান্ড ম্যাডাম। আমার বদলির বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন এসি ল্যান্ড ম্যাডাম। সম্ভবত কর্ণফুলী ভূমি অফিসে এলএ শাখার সার্ভেয়ার মো. জোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া যোগদান করুক সেটা কর্তৃপক্ষ চাচ্ছেন না।’
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সার্ভেয়ার মো. জোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া বদলির আদেশ ঠেকাতে মরিয়া। তার বিরুদ্ধে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। এর আগে তাকে একাধিকবার বদলি করা হলেও তদবির করে ঘুরেফিরেই তিনি থেকে যান এলএ শাখায়। চট্টগ্রামে সাবেক জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান দায়িত্বপালনকালে জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ বিপুল অঙ্কের কমিশনের টাকাসহ রিফাত নামের এক দালাল ধরা পড়ে। উক্ত দালালের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে মর্মে অবহিত করার পর সাবেক জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান সার্ভেয়ার জোবায়ের আহমেদকে তাৎক্ষণিক বদলি আদেশ দেন।
কিন্তু কিছুদিন পরেই পুরনো কর্মস্থলে ফিরে আসেন জোবায়ের। বাঁশখালীর বাসিন্দা রিফাত সার্ভেয়ার জোবায়েরের হয়ে সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কমিশনের টাকার দরকষাকষি করেন। রিফাত আদালত এলাকার বিপরীতে রঙ্গম টাওয়ার ভবনে রীতিমতো অফিস করেন। নিয়মিত কর্মচারীর মতো দিনভর এলএ শাখায় অফিস করেন রিফাত। সন্ধ্যার পর এলএ অফিস থেকে বিভিন্ন মামলার (সার্ভেয়ার জোবায়েরের কাছে থাকা এলএ কেইস নথি) ফাইল নিয়ে চলে যান রঙ্গম টাওয়ারের কথিত চেম্বারে। এই রিফাতকে ‘নিয়োগ’ দেন সার্ভেয়ার জোবায়েরই।
অভিযোগ, বদলি ঠেকাতে সার্ভেয়ার শওকত জামানকে ১৫ লাখ টাকা অফার করেছেন সার্ভেয়ার মো. জোবায়ের আহমেদ। অতিসম্প্রতি শওকতের সঙ্গে তার একটা ‘গোপন চুক্তি’ হয়েছে। সেই চুক্তি মোতাবেক নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিতে পারিবারিক কারণ দেখাতে সার্ভেয়ার শওকতকে পরামর্শ দিয়েছেন সার্ভেয়ার জোবায়ের। পাশাপাশি নিজের বদলির আদেশ প্রত্যাহার করাতে দুজন আইনজীবীর মাধ্যমে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের কাছে তদবির করানোরও চেষ্টা করছেন সার্ভেয়ার জোবায়ের। জেলা প্রশাসককে বলে বদলি ঠেকাতে দুই আইনজীবীকে সার্ভেয়ার জোবায়ের মোটা অঙ্কের টাকাও ঢেলেছেন। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার বিকেলে একাধিকবার কল করা হলেও মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি সার্ভেয়ার মো. জোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া।