দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্ত্র রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ায় দিল্লি পশ্চিমা দেশগুলোর দিকেও নজর দিচ্ছে। এবার খোদ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় বাড়াবে ভারত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার দেশ ২০২৫ সাল থেকে ভারতের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করবে। তবে পাকিস্তান এমন পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, এমন অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ হলে তা দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক ভারসাম্যহীনতা আরও বাড়াবে।
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ভারতের কাছে বহু বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বাড়াচ্ছি। একই সঙ্গে ভারতকে এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটার জেট দেওয়ার পথ সুগম করছি।
তবে তিনি নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি। সাধারণত উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র বিক্রির প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় নেয়। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরও জানান, দুই দেশ এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার আওতায় ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে তেল ও গ্যাস আমদানি করবে। এর ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। এ ছাড়া উভয় দেশ ‘চরমপন্থি ইসলামি সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করবে বলেও জানান ট্রাম্প। তবে এফ-৩৫ কেনার বিষয়ে ভারতের আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, ‘ভারত বিদেশি সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। এর মধ্যে প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া ও মূল্যায়নের ধাপ রয়েছে। এখন পর্যন্ত উন্নত যুদ্ধবিমান কেনার সে প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এটি আপাতত কেবল একটি প্রস্তাব।’
এফ-৩৫ নির্মাতা লকহিড মার্টিন জানিয়েছে, এ ধরনের সামরিক বিক্রির আলোচনা সরকার-সরকার পর্যায়ে হয়ে থাকে। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন) এ ধরনের লেনদেনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে।
লকহিড মার্টিন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের জন্য তিন ধরনের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করছে। এর ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, ইসরায়েল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও বেলজিয়াম।
দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্ত্র রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ায় দিল্লি পশ্চিমা দেশগুলোর দিকেও নজর দিচ্ছে। যদিও রাশিয়া ইতিমধ্যে ভারতের বিমান বাহিনীর জন্য দেশটিতে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান সুখোই এসইউ-৫৭ তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন রুশ ও ভারতীয় কর্মকর্তারা।
এদিকে ভারতকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়ার মার্কিন প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পাকিস্তান বলেছে, এমন অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ হলে তা দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক ভারসাম্যহীনতা আরও বাড়াবে। গত শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলি খান মার্কিন-ভারত যৌথ বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের নামে করা মন্তব্যকে ‘একপেশে’, ‘বিভ্রান্তিকর’ ও ‘কূটনীতিক শিষ্টাচার পরিপন্থি’ বলেও অভিহিত করেছেন বলে জানিয়েছে ডন।
ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি যৌথ বিবৃতিতে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা ও পাঠানকোটের ঘটনার জন্য দায়ীদের ‘দ্রুত বিচারের’ মুখোমুখি করতে এবং পাকিস্তানের ভূখণ্ড যেন সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহৃত না হয়, তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতে ইসলামাবাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবারের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে শাফকাত খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান সন্ত্রাসবিরোধী অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা সত্ত্বেও যৌথ বিবৃতিতে এমন কথা থাকায় আমরা অবাক। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে, বিদেশিদের দ্বারা সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদজনিত সংকট মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ বিবৃতির ভাষ্য প্রত্যাখ্যান করে শাফকাত আলি খান বলেন, এই ধরনের মন্তব্য ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় এই অঞ্চল ও বাইরে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদ, নাশকতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করতে পারবে না। এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এড়িয়ে মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ভারতের বিদ্বেষমূলক অপরাধের সত্যকেও চাপা দিতে পারবে না।
নয়াদিল্লির কাছে এফ-৩৫ হস্তান্তরের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ এই অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্যহীনতা বাড়িয়ে তুলবে ও কৌশলগত স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।