রাশিয়া থেকে নগদে দুই লাখ টন গম আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বিকল্প উৎস হিসেবে ইউক্রেন এবং আর্জেন্টিনা থেকে গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সঙ্গে গত ১৯ জানুয়ারি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন রাশিয়ার নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দুই লাখ টন গম বাকিতে সরবরাহের অনুরোধ করেন। এ সময় রাশিয়া দূতাবাসের কাউন্সিলর ভ্লাদিমির মোচালভ ও রাশিয়া বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মিয়া সাত্তারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া আগে বাকিতে বাংলাদেশকে গম দিয়েছে। কিন্তু এবার তারা বাকিতে গম দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য উপদেষ্টা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাশিয়া বাকিতে না দিলে সমস্যা নেই। আমরা নগদেই আনব। রাশিয়া ছাড়াও আমরা নানা উৎস থেকে গম সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। রাশিয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনও গম দিতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের গম কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। ইউক্রেনের গম আনতে হলে আবার রাসায়নিক পরীক্ষার দরকার হয়। আর্জেন্টিনা থেকেও গম আমদানির একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবহন খরচ একটু বেশি বলে আপাতত আমরা আর্জেন্টিনার গমের কথা ভাবছি না।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেন সরকারও বাংলাদেশের কাছে গম বিক্রির জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইউক্রেনের খাদ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসতে চাচ্ছেন। এ ধরনের একটা প্রস্তাব খাদ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হলে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি শুরু করার অনুরোধ করেন।
সরকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে গম ব্যবহার করে। এর মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের রেশন দেওয়া হয় গম বা আটায়। এ ছাড়া খোলা বাজারে বিক্রয় (ওএমএস), খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, চা-সংসদের আওতাভুক্ত চা বাগানগুলোয় কর্মরত গরিব ও দুস্থ শ্রমিকদের ও বাজারে প্যাকেট আটা বিক্রয় কর্মসূচির জন্য গম বরাদ্দ করা হয়। খাদ্যশস্যের বাজার দরে ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার খোলাবাজারে ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে চাল ও আটা বিতরণ করে। এ কর্মসূচিতে মূলত দরিদ্র ও নিম্নআয়ভুক্ত শ্রেণির মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য সহায়তা লাভ করে। বছরের বিভিন্ন সময়ে ঢাকা মহানগর, শ্রমঘন চার জেলা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় এ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া জেলা সদর ও জেলা সদর বহিভর্‚ত ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভায় ওএমএস পরিচালনা করা হয়। ময়দা মিলের মাধ্যমে গম পেষণ করে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে খোলাবাজারে আটা বিক্রয় খাদ্য অধিদপ্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে গমের আমদানি বাড়ছে। ২০২৪ সালে সরকারি খাতে গম আমদানি হয়েছে ৯ লাখ টন। এ সময় বিশ্ববাজারে গমের দাম নিম্নমুখী থাকায় বেসরকারিভাবে আমদানিকারকরা রেকর্ড পরিমাণ গম আমদানি করেছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের হিসাবে, ২০২৪ সালে প্রায় ৭২ লাখ ৭৫ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে। ২০২৩ সালে আমদানি হয়েছিল ৫৪ লাখ ১৭ হাজার টন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে গম আমদানি বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। আমদানি বৃদ্ধির এই হার গত আট বছরে সর্বোচ্চ।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আমদানি হওয়া গমের অর্ধেকই এসেছে রাশিয়া থেকে। দেশটি থেকে আমদানি হয় ৩৬ লাখ ৫৯ হাজার টন গম, যা মোট আমদানির প্রায় ৫০ শতাংশ। চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। বাকি ৮৫ শতাংশই আমদানি হয়।