শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

সয়াবিন তেলের সঙ্গে অচল পণ্য 

  • ডিলারের কাছে জিম্মি খুচরা ব্যবসায়ীরা
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫২ এএম

বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহের শর্ত হিসেবে ডিলাররা বিভিন্ন ধরনের অচল পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীদের। ক্রেতা ধরে রাখতে অনেকটা বাধ্য হয়েই সেসব পণ্য নিচ্ছেন তারা। এসব পণ্য বাবদ যে লোকসান হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে খুচরা ব্যবসায়ীরা তেলের বাড়তি দাম আদায় করছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে। নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে এ চিত্রই পাওয়া গেছে।

নগরীর লালখান বাজার হাইলেভেল রোডের মুদি দোকানদার আমির হোসেন বলেন, ‘তিনি সাধারণত পুষ্টি, রূপচাঁদা ও তীর ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করেন। কিন্তু সরবরাহে ঘাটতির কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রেতাদের তেলের চাহিদা মেটাতে পারছেন না। তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্ত মেনে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক লিটার ও দুই লিটারের কিছু বোতলজাত সয়াবিন নিয়েছেন ডিলারের কাছ থেকে।’

দেশ রূপান্তরকে তিনি জানান, ‘তেলের সঙ্গে আমাকে নিতে হয়েছে চিনিগুঁড়া চালের প্যাকেট, মশার কয়েল ও বোতলজাত সরিষার তেল। ডিলাররা যেসব পণ্য নিতে বাধ্য করছেন, বাজারে সেগুলো চলে না। তারপরও বাধ্য হয়ে নিচ্ছি।’

চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দীঘিরপাড় বাজারের মুদি দোকানদার সুধীর দেব এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দুই সপ্তাহ বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রেখেছিলেন ডিলাররা।’

গত সপ্তাহের শেষদিকে ডিলারের লোকজন জানান, ‘তেল নিতে হলে সঙ্গে অন্য জিনিসও নিতে হবে। ডিলারের শর্তে রাজি হয়েই তেল পেয়েছি। চার কার্টন সয়াবিন তেলের সঙ্গে ১০ কেজি চিনিগুঁড়া চাল ও বিভিন্ন সাইজের বোতলের পাঁচ লিটার সরিষার তেল কিনতে হয়েছে। তেলের সঙ্গে যেসব পণ্য কিনতে হচ্ছে, সেগুলোর বাজারে চাহিদা নেই। তারপরও নিচ্ছি। অন্য কোম্পানির পণ্যের সঙ্গে মিশিয়ে তা বিক্রি করতে হবে। ক্রেতাদের কাছ থেকে তেলের বাড়তি দাম নিয়ে লোকসান পুষিয়ে নিতে হচ্ছে। এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে ১৭৫ টাকা দাম লেখা থাকলেও ১৮৫-১৯০ টাকা দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট। খুচরা দোকানগুলোয় বোতলজাত তেল নেই বললেই চলে। ডিলাররা তেল সরবরাহ করছেন না। তারা বলছেন, মিল থেকে সরবরাহ না পাওয়ার কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিল থেকে সরবরাহ পাওয়া তেলও ডিলাররা স্টক করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন, যাতে সংকট দেখিয়ে রমজানের আগে বাড়তি মুনাফা করা যায়। সম্প্রতি নগরীর ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক অভিযানে এ অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক ফয়েজ আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল কোম্পানিগুলো ডিলারের কাছে তেল সরবরাহ করলেও ডিলাররা দোকানগুলোয় তেল দিচ্ছেন না। তেল কিনতে গেলে বলছেন তেল নেই। এ তথ্য ধরে আমরা খাতুনগঞ্জের মেসার্স আল আমিন স্টোরে তেল আছে কি না খোঁজ নিতে আমাদের একজনকে পাঠাই। তারা বলেছেন, তেল নেই। পরে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তেল পেয়েছি। তাদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। “সাতকানিয়া স্টোর” নামে পুষ্টি সয়াবিন তেলের এক ডিলারের কাছে গিয়ে আমরা জিজ্ঞেস করেছি তেল আছে? তারা আমাদের বলেছেন, তাদের কাছে তেল নেই। অথচ কোম্পানির তথ্যমতে, ওই ডিলারের কাছে ১৩০০ কার্টন অর্থাৎ ২৪ হাজার লিটার তেল সরবরাহ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে মালিক ৬০০ কার্টন তেল পাওয়ার কথা স্বীকার করে মাত্র ৪০ কার্টন তেল সরবরাহের হিসাব দিতে পেরেছেন। বাকিগুলোর হিসাব দিতে পারেননি। তার মানে তিনি গোঁজামিল দিয়েছেন। তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

সাতকানিয়া স্টোরের মালিক মো. আবছার জানান, ‘আসলে কোম্পানি আমাকে ১৩০০ কার্টনের স্থলে ৬০০ কার্টন তেল সরবরাহ করেছে। বাকি তেল পরে সরবরাহ করার কথা। আমি যা পেয়েছি, সেগুলো বাজারে সরবরাহ করে দিয়েছি। কিন্তু ডকুমেন্ট পাইনি এখনো। কোনো অনিয়ম আমি করিনি। ওনারা তো ডকুমেন্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। তাই জরিমানা করেছেন। এখানে বেশি দামে তেল বিক্রির কোনো অভিযোগ নেই।’

সয়াবিন তেল সরবরাহে অন্য পণ্য কিনতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করা প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকারের উপপরিচালক ফয়েজ আহমদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যদি আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’ 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত