শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

কবিতার বইয়ের প্রকাশ বেশি, বিক্রি কম 

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৫ এএম

অমর একুশে বইমেলার ইতিমধ্যেই ১৭ দিন পেরিয়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে, মেলায় দর্শনার্থীদের পদচারণা বেড়েই চলছে, বইয়ের বিক্রিও বাড়ছে আনুপাতিক হারেই। দূর-দূরান্ত থেকে পাঠকরা বইমেলায় আসছেন এবং নিজেদের পছন্দমতো বই কিনছেন। বাংলা একাডেমি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবারের বইমেলায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়েছে কবিতার বই। তবে বিক্রিতে শীর্ষে উপন্যাস, থ্রিলার, গল্প, সায়েন্স ফিকশন ও অনুবাদধর্মী বইগুলো। তবে কবিতার বইয়ের মান কমে যাওয়ায় পাঠকরা কবিতার বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এবারের মেলায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত গল্প, নাটক, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, সায়েন্স ফিকশন, জীবনী, বিজ্ঞান, ভ্রমণ, ধর্ম, স্বাস্থ্যসহ ২৩টি ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৬৪৪টি নতুন বই এসেছে, যার মধ্যে ৫৪৯টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে, যা আনুপাতিক হিসাবে প্রায় ৩৩ শতাংশ। তবে প্রকাশিত কবিতার বই সংখ্যায় বেশি হলেও বিক্রি তুলনামূলক অনেক কম। 

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ দপ্তরের তথ্যমতে, গত ছয় বছরে বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা সাড়ে ১৮ হাজারের অধিক। তার মধ্যে কবিতার বই এসেছে ৬ হাজার ৩৫৫টি (গতকাল পর্যন্ত)। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৫৮৫টি, ২০২১ সালে ৮৯৮টি, ২০২২ সালে ১ হাজার ৬০টি, ২০২৩ সালে ১ হাজার ২৪৭টি এবং ২০২৪ সালে ১ হাজার ৫৭-এর বেশি এবং ২০২৫ সালে (রবিবার পর্যন্ত) ৫০৮টি কবিতার বই এসেছে। 

বইমেলায় ঘুরে দেখা যায়, পাঠকরা বেশিরভাগই আগ্রহ দেখাচ্ছেন উপন্যাস, থ্রিলার, অনুবাদধর্মী বইগুলোর প্রতি। খুব কম পাঠকই কবিতার বই কিনছেন। 

কবিতার বই কিনতে আসা এক পাঠক আব্দুর রহমান বলেন, ‘কবিতা হলো আবেগ, সবাই সেটার মর্ম উপলব্ধি করতে পারে না। তাই কবিতার বই বিক্রি কম। তবে ইদানীং কবিতার বইয়ের মানও কমে গেছে, তাই পাঠকেরও আগ্রহ কমে গেছে।’ 

সালমান নামের আরেক পাঠক বলেন, বর্তমানে লেখকদের কবিতার বইগুলো এককেন্দ্রিক। এখন মানুষ কবিতা লেখেন বৈরাগী হয়ে। মানুষ ভাবছে কবিতা মানেই প্রেম, প্রেম মানেই কবিতা। প্রেম ছাড়া কবিতার বই খুব একটা দেখা যায় না। ফলে মানসম্মত কবিতার বই আসছে না। তাছাড়া মানুষ মাথা খাটিয়ে চিন্তা করতে চায় না। তারা বলে কবিতা পড়ে লাভ কি? এতকিছুর মধ্যেও কিছু কবিতাপ্রেমী রয়েছেন, যারা কবিতা লেখেন ও পড়েন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিক বলেন, ‘কবিতার ভাষা অনেক কঠিন। সাধারণ মানুষ সেগুলো কিনে পড়ার আগ্রহ দেখান না। যা দু-একটা পড়েন সেটাও অনলাইনে পড়ে নেন। তাছাড়া আগে যেমন রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, আহসান হাবীব, আল মাহমুদের মতো কবিরা ছিলেন, এখন তেমন মানসম্মত লেখেন এমন কবি নেই বললেই চলে।’ 

চলন্তিকা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সাবিত আলম বলেন, ‘আমাদের স্টলে বেশ কিছু কবিতার বই এসেছে। কিন্তু বিক্রি অনেক কম। আমাদের স্টলে ছোটদের ভুতের সিরিজ আর থ্রিলার উপন্যাস বেশি চলছে। পরিচিতজন ছাড়া আর কবিতাপ্রেমী ছাড়া কেউ কবিতার বই নিতে চান না।’

কাকলী প্রকাশনীর এক বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘নির্মলেন্দু গুণের কবিতার বই আমাদের স্টলে পাওয়া যায়। তবে মানুষ অন্যান্য বই যেমন কেনার প্রতি আগ্রহ দেখায়, কবিতার বইয়ের প্রতি তেমন আগ্রহ দেখায় না।’ 

মাতৃভাষা প্রকাশনীর এক বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘খুব কম পাঠকই কবিতার বই দেখতে চায়। তারা গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ থ্রিলার চায়।’

মাতৃভাষা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী নেছার উদ্দিন আইয়্যুব বলেন, ‘কবিতার বইয়ের পাঠক সবসময়ই কম ছিল। কবিতা হলো একটি শব্দশিল্প, এই শিল্পকে সহজে পাঠোদ্ধার করে আনন্দ নেওয়াটা সবার জন্য সহজ না। একটি ছবি যেমন মানুষ দেখতে পছন্দ করে, একজন শিল্পীর চিত্রকর্ম কিন্তু মানুষ তেমন পছন্দ করে না। পর্বতারোহণ অনেক আনন্দের হলেও সবাই সেটা করতে চায় না।

তাছাড়া কবিতার বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এখানে লক্ষ-কোটি বিনোদনের উপকরণ থাকায় মানুষ সেখান থেকে বিনোদন নিচ্ছে। কষ্ট করে বই, বিশেষ করে কবিতার বই পড়তে অনাগ্রহী হচ্ছে।’ 
গতকাল বইমেলার ১৭তম দিনে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছিল ১১৩টি। বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৯টায় মেলা শেষ হয়।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত