সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

অবৈধ বস্তি রক্ষার তোড়জোড়

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৯ এএম

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীদের দাবিতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) অবৈধ বস্তি ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিভিন্ন কারণে মাঝে কিছুদিন উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত থাকলেও গত সপ্তাহে পুনরায় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভাড়াটিয়া ও গরু-ছাগলের খামার উচ্ছেদ করা হয়েছে। ভাড়াটিয়া অবস্থানকারী কয়েকটি বাড়িতে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। তবে এ উচ্ছেদ ঠেকাতে তোড়জোড় শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মচারী।

আর তাদের পেছন থেকে মদদ দিচ্ছেন প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা। অবশ্য ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার স্বার্থে অভিযান অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ একর জুড়ে কর্মচারীদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য বিনামূল্যে ‘প্লট’ আকারে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে তারা নির্ধারিত জায়গার অতিরিক্ত এলাকা দখল করে বস্তি গড়ে তুলেছেন।

এসব বস্তিতে বহিরাগতদের ভাড়া দিচ্ছেন। অবশ্য বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইনগুলো থেকে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে অধ্যাপক মো. আবুল বাশার প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে অবৈধ বস্তি ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ শুরু করেন। অক্টোবরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেলে অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত হয়। ওই মাসে অধ্যাপক ড. আরফান আলী নতুন প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পুনরায় শুরু করেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধভাবে অবস্থানকারী ৩০০ পরিবারের মধ্যে ২১০টি পরিবার ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। এরপর কিছুদিন অভিযানে মন্থরতা দেখা দিলে ভাড়াটিয়ারা ফের ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে শুরু করে। এর মধ্যে চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রক্টরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সে সময় ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ভাড়াটিয়াদের ক্যাম্পাস ত্যাগ এবং অবৈধভাবে দখল করা সব স্থাপনা ও জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর মধ্যে গত ১১ ফেব্রুয়ারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানার নেতৃত্বে অভিযান বন্ধের সুপারিশ নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে যান কর্মচারীরা। কয়েকজন কর্মকর্তার পরামর্শে তারা প্রক্টরের সঙ্গে দেখা করেন।

এরপর থেকে অভিযানও থমকে আছে। অবশ্য সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা চাইছেন উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকুক।

সব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক।

শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বিএম আলমগীর কবির বলেন, ‘অবৈধ ভাড়াটিয়া ও বহিরাগতদের অবাধ বিচরণে ক্যাম্পাসে মাদকের প্রভাব বেড়ে যায়। আমরা দ্রুত বস্তি ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ চাই। এতে প্রশাসনের কোনো সাপোর্ট দরকার হলে আমরা সেটা করব।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কৃষি ও পরিবেশ সেলের সম্পাদক মো. তৌহিদ আহমেদ আশিক বলেন, ‘বস্তির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য জায়গা কমে গেছে। মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর বিপদগামী হয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। বস্তি ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান নিলে আমরা তাদের বিরুদ্ধের প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’

কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘কর্মচারীদের পক্ষে আমরা কিছু দাবি নিয়ে গিয়েছিলাম। কারও দখলে অতিরিক্ত জায়গা থাকলে আমরা নিজেরাই সেগুলো সরিয়ে নেব। এজন্য আমরা আরও কিছুদিন সময় চেয়েছি।’

প্রক্টর অধ্যাপক ড. আরফান আলী বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সময় দিয়েছি। অনেকেই নির্দেশনা অমান্য করেছে।

ফলে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। নিয়মের মধ্যে থাকলে আমরাদেরও শক্ত অবস্থানে যেতে হবে না। তবে নিয়মবহির্ভূত কোনো ব্যাপারে কারও অনুরোধ শোনা হবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে আমি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। আমরা সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত