খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে এই সংঘর্ষ কুয়েটের পার্শ্ববর্তী রেলিগেট ও তেলিগাতিসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকা। এতে একজন শিক্ষকসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের কুয়েটে মেডিক্যাল সেন্টার ও খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে, সন্ধ্যা থেকে ক্যাম্পাসের বাইরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া চলছিল। গত সোমবার তারা ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করে। এর জেরে মঙ্গলবার সকালে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। বেলা ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। এ সময় তারা ‘ছাত্র রাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটায়, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করে। এরপর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেয়। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এরপর দুপুর দুইটার দিকে কুয়েট পকেট গেটের বাইরে বিএনপি সমর্থিত বহিরাগতরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে। এরপর সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থী একজোট হয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় ক্যাম্পাস সংলগ্ন রেলিগেট ও তেলিগাতিসহ আশপাশ এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে যোগ দেয়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। দুপক্ষের সংঘর্ষে কুয়েটের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াস, খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন, শিক্ষার্থী আখেরুল ইসলাম, তানভীর হায়দার, খুলনা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম, জেলা কমিটির আহ্বায়ক তাসনিম আহমেদ, রাতুলসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।
কুয়েটের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে ভিসির কাছে গেলে ছাত্রদলের ছেলেরা আমাদের হুমকি দেয়। তারা সিনিয়রদের লাঞ্ছিত করে। আমরা ভিসির কাছে এই বিচার দিয়ে বের হয়ে আসার পর বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। পরে আশপাশের এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তারা আবার হামলা চালায়। এতে অসংখ্য ছাত্র আহত হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম ইমন বলেন, বিনা উস্কানিতে ছাত্রদলের কর্মীরা ছাত্রদের রক্ত ঝরিয়েছে। তারা কুয়েটের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলামকে রামদা দিয়ে কুপিয়েছে। জেলার আহ্বায়ক তাসনিম ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রাতুলের পা ইট দিয়ে থেতলে দিয়েছে।
খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি দাবি করেন, প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা প্রথমে সাধারণ ছাত্রদের ওপর অতর্কিতে হামলা করে। পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে তারা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা চালায়। পুরো ছাত্রশিবির এই হামলা করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন ছাত্রলীগে ভরে গিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর শিবিরের হামলার অভিযোগ হাস্যকর একটি ব্যাপার। কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আজ (মঙ্গলবার) সারাদিন শহিদ হাদিস পার্কে জামায়াতে ইসলামীর প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তবে,সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে বলে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা ও জড়িতদের বিচার চাই।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বলেন, আমি আহত ছাত্রদের দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে রয়েছি। তবে পরিস্থিতি ভালো না। ক্যাম্পাসে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।