বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

সারা বছর পানিবন্দি সাত গ্রামের মানুষ

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫২ এএম

যশোরের কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নে প্রভাবশালী ঘের মালিকদের অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ওই ইউনিয়নের সাত গ্রামের মানুষ সারা বছরই পানিবন্দি থাকছে। বসতবাড়িতে পানি ওঠার কারণে অনেক পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।

পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বৈদ্যনাথ সরকার বলেন, দুই যুগ ধরে এলাকায় কোনো ফসল হচ্ছে না। ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর, পাথরঘাটা, মাদারডাঙ্গা, কালীচরণপুর, নারায়ণপুর, বেতিখোলা গ্রামের মানুষ অতীতে চাষাবাদসহ খাল-বিলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০০০ সালে এলাকার প্রভাবশালীরা ব্রিজ, কালভার্টের মুখ ভরাটসহ অপরিকল্পতভাবে বেড়িবাঁধ দিয়ে বিলে মাছের ঘের করেন। এরপরও প্রতি শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে বিল ভরাট করা হয়। ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই মানুষের বসতবাড়িতে পানি উঠে যায়। এলাকায় দেখা দেয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা। প্রায় সারা বছরই এসব গ্রামের মানুষের বসতভিটায় পানি থাকে। ঘেরের কারণে জেলেরা বাধ্য হয় পেশা বদল করছেন। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে মানুষের স্বাস্থ্যও এখানে ঝুঁকিপূর্ণ। বাড়ছে পানিবাহিত রোগ ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ঘর থেকে বের হলেই যাতায়াতের জন্য ডিঙি নৌকা, বাঁশের সাঁকোই ভরসা। এতে গ্রামীণ অবকাঠামো একেবারেই ভেঙে পড়েছে।

সরেজমিনে বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের বাড়িতে এখনো থই থই করছে পানি। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস থেকে গ্রাম দুটির মানুষের বাড়িতে পানি। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানানো হলেও এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

মনোহরনগর গ্রামের অজিত মন্ডল বলেন, তার বাড়ির উঠানে কোমর সমান পানি। বাগডাঙ্গা-মনোহরনগর খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত সাত মাস তারা পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশও নেই বাড়িতে। শীতকালে পানির মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে মানুষের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। দুই গ্রামের কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে রয়েছে।

‘২৭ বিল বাঁচাও’ আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, ‘বোরো আবাদের লক্ষ্যে মাছের ঘেরের পানি সেচ দিয়ে বাগডাঙ্গা-মনোহরনগর খালে ফেলায় পানি উপচে গ্রামে ঢুকছে। নদ-নদী পলিতে ভরাট হওয়ায় এলাকার বিলগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। নদী খননসহ ভবদহ অঞ্চলের যেকোনো একটি বিলে টিআরএম চালু করা না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমগীর বলেন, ‘দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধ থাকায় বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর গ্রামের মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছে। গ্রাম দুটি থেকে মাঝেমধ্যে ডেঙ্গু রোগী আসছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’ কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, ‘হরিহর, বুড়িভদ্রা, আপার ভদ্রা ও শ্রী নদী খননের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে তার প্রাক্কলন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নদ-নদী খনন হলেই এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত