রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। ইমান ও নামাজের পরই রোজার অবস্থান। ফরজ ইবাদত হিসেবে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। রোজা বান্দাকে সংযমী ও সহিষ্ণু করে, ধৈর্যশীলতার শিক্ষা দেয়, পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত রাখে, কল্যাণের দিকে ধাবিত করে এবং নতমুখে মহান আল্লাহর কাছে অসহায়ত্ব বরণ করতে শেখায়। এভাবে রোজা বান্দাকে সার্বিক দিক দিয়ে পরিশুদ্ধ করে তোলে। এতে বান্দা পৌঁছে যায় মহান আল্লাহর সন্নিকটে। বান্দা সারা বছর ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়ে নিজের জীবনকে কলুষিত করে। সরল সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গুনাহের পাল্লাকে ভারী করে। এভাবে একসময় আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা বান্দার কল্যাণ চান। বান্দাকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে চান। মহান আল্লাহ চান বান্দা তাকওয়া অর্জন করুক। এ গুরুত্ব নিয়েই আল্লাহতায়ালা এক মাসব্যাপী রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। এতে পাপাচারে নিমজ্জিত বান্দারা অপার সুযোগ পায় নিজেকে শোধন করে তাকওয়া অর্জন করতে। আর মুত্তাকিরা সুযোগ পায় মহান আল্লাহর আরও বেশি নিকটবর্তী হতে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা ১৮৩)
রোজার ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। রোজা এমন এক ইবাদত, যে ইবাদতের প্রতিদান আল্লাহতায়ালা নিজে দেবেন। প্রত্যেক নেক কাজের জন্য আল্লাহতায়ালা ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সওয়াব দেন। আর রোজার প্রতিদানের সওয়াব কোনো হিসাব করে দেবেন না। বরং বিনা হিসাবে অগণিত সওয়াব দেবেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেছেন, রোজাদার ব্যক্তি আমার জন্য পানাহার ও কামাচার পরিত্যাগ করে। রোজা শুধু আমারই জন্য। আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (সহিহ বোখারি)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার শপথ! যার হাতে মুহম্মদের জীবন, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহতায়ালার নিকট মিশকের সুঘ্রাণের চেয়েও উৎকৃষ্ট।’ (ইবনে মাজাহ)।
রোজাদারের মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে করে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।’ (সহিহ বোখারি)
রোজা বান্দার গুনাহসমূহকে মুছে দেয়। বান্দাকে নিষ্কলুষ করে তোলে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বোখারি)। রোজাদার ব্যক্তির জন্য রোজা কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর কাছে জান্নাতের সুপারিশ করবে। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘রোজা বলবে, হে প্রভু! আমি তাকে পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ (মুসনাদে আহমদ)
আল্লাহতায়ালা যে গুরুত্ব নিয়ে আমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন এবং রোজায় যেসব উৎকৃষ্ট ফজিলত রেখেছেন, তা শুধু বান্দার দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জনের জন্যই। তাই সবার উচিত খুব গুরুত্ব দিয়ে ফজিলতময় এ রমজান থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হওয়া।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক