মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সাটুরিয়া

পিআইও ও এলজিইডির বিরোধ: সেতু তুমি কার?

আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:২২ পিএম

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় দুই দপ্তরের কর্মকর্তার রশি টানাটানিতে সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার রৌহা বাকপাড়া খালের ওপর সেতু নির্মাণে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তবে এলজিইডি প্রকৌশলীর বাঁধার কারণে নির্মাণ কাজ করতে পারছে না বলে অভিযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার।

জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন খালের ওপর নয়টি সেতু নির্মাণের অনুমোদন পায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে টেন্ডার আহ্বান করেন। এরমধ্যে একটি নতুন সেতু হবে। সেখানে ৪০ বছরের পুরনো একটি সরু সেতু রয়েছে। সেই পুরানো পরিত্যক্ত সেতু নিলাম করে অপসারণ করার জন্য মৌখিকভাবে এলজিইডি কর্মকর্তাকে বলা হলেও তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।

কিন্তু সেতুটি অপসারণ না করে দীর্ঘদিন পায়তারা করার কারণে প্রকল্পের টাকা ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এলজিইডির প্রকৌশলী মো.ইমরুল হোসেন দাবি করেন, এ সড়কটি তাদের। যার কোড নম্বর ৪০৬৪। এ সড়কের মধ্যে বা খালের ওপর সেতু নির্মাণ করবে এলজিইডি বিভাগ।

সেতুর পাশের বাড়ির বাসিন্দা মো. হায়দার আলী বলেন, প্রায় ৪০ বছর আগে বাকপাড়া খালের উপর মানুষের পায়ে হাঁটার জন্য একটি সরু সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটি এখন ভগ্নদশা। সেতুর চারিদিকে রেলিংসহ পাটাতন উঠে গেছে। সেতুতে বড় বড় গর্ত হয়েছে। এছাড়া দুইপাশ থেকে দুটি ভ্যান গাড়ি উঠে আসলে ক্রস হতে পারে না। সেতুটি সরু হওয়ায় এই এলাকার সানুষ দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। শুনেছি এখানে নাকি নতুন সেতু হবে। সেটাও নাকি বন্ধ করে দিয়েছে এলজিইডি কর্মকর্তারা।

সাটুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান বলেন, ডিএস, সিএস, এসএ ও আরএস পর্চায় সড়কের মালিক আমি। ১৯৯৮ সাল হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ সড়কে রক্ষাণাবেক্ষণ করি আমরা। এছাড়া আন্তঃমন্ত্রাালয়ের এক রেজুলেশনে আমরা যেকোনো সড়কের উপর সেতু নির্মাণ করতে পারি। এতে কোন বাধা নেই। কিন্তু এলজিইডি কর্মকর্তা কেন সেতু নির্মাণে বাঁধা দিচ্ছে জানি না। এ বিষয়ে মানিক সমন্নয় সভায় বিষয়টি সুরাহা করার জন্য ইউএনওর হস্তক্ষেপ চেয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করতে না পেরে সময় বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেন। এ সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ করা না হলে বরাদ্ধকৃত ২৭ লাখ ৮০ হাজার ২৫২ টাকা ফেরত যাবে। ফলে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবে এলাকাবাসী। বাকপাড়া খালের উপর একটি সরু সেতু রয়েছে। তা নিলামের মাধ্যমে অপসারণ করার জন্য বলা হলেও এলজিইডি বিভাগ কোনো কর্ণপাত করছে না। উল্টো ওই সড়ক তারা দাবি করছে। ফলে সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে।

সাটুরিয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. ইমরুল হোসেন বলেন, কয়েক বছর আগেই রৌহা গ্রামের বাকপাড়া সড়কটি এলজিইডির কোড নম্বর পড়েছে। ফলে ওই সড়কের যা কিছু উন্নয়ন করা হবে তা এলজিইডি বিভাগ করবে। আর বাকপাড়া খালের উপর সেতুর টেন্ডার আহ্বান করবে এলজিইডি বিভাগ। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কিভাবে এলজিইডির সড়কের উপর নতুন সেতু নির্মাণের দরপত্র আহবান করেন।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের যে রেজুলেশন দেখিয়েছেন তার মেয়াদ ৫ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। তিনি সেই রেজুলেশন দেখিয়ে কীভাবে সেতু নির্মাণের দাবি করেন।

সাটুরিয়ার দরগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলীনূর বকস রতন বলেন, রৌহা গ্রামের বাকপাড়া খালের উপর একটি সরু সেতু রয়েছে। যা সাধারণ মানুষের কোনো উপকারে আসে না। ওই সেতু দিয়ে একটি ভ্যান গাড়ি চলাচল করতে পারে না। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের আহ্বানে নতুন একটি সেতু করার প্রস্তাব করা হয়। সেটি পাশও হয়। কিন্তু সড়কটি দুই অফিসের কর্মকর্তাদের ঠেলাঠেলির কারণে প্রকল্পর মেয়াদ শেষ হয়। ফলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করতে না পেরে সময়ের জন্য আবেদন করেন। ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও এলজিইডি বিভাগের বাধার কারণে সেতুটি নির্মাণ কাজ করতে পারছে না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফৌজদার এন্টারপ্রাইজ। সেতুটি নির্মাণ না হলে প্রায় কযেক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাবে বলে তিনি দাবী করেন।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, দুই অফিসকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে যেন সেতুটি নির্মাণ করা যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত