মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

দুঃসাহসী মানুষের কাহিনি

আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০৫ এএম

প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়েছে। নিজের, পরিবারের, সমাজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়েছে। সভ্যতা নির্মাণের এই লড়াইয়ে কখনো মানুষের জয় হয়েছে, যার ফলে মানুষ আজও তার অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে। কখনো বা মানুষের পরাজয় ঘটেছে। প্রকৃতির ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে গিয়ে মানুষ ছাড়িয়েছে সীমা। তার ফলও ভোগ করেছে মানুষ। প্রকৃতি নিয়েছে প্রতিশোধ। অগ্ন্যুৎপাত, দাবানল, মহামারী, ভূমিধস, ভূমিকম্প প্রভৃতি মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে গেছে জনপদ। অন্য জনপদের মানুষ সে ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সমঝে চলেছে প্রকৃতিকে। মানুষ ও প্রকৃতির সীমারেখা হয়েছে নির্ধারিত। পরস্পরের সমান্তরালে দীর্ঘদিন তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু কখনই মানুষের অভিযানপ্রিয়, সীমা ছাড়াতে চাওয়া, শিকারি মন নিশ্চেষ্ট হয়ে থাকেনি আর প্রকৃতিও নিজের পরিচর্যা ছেড়ে দিয়ে মানুষের পোষ মানেনি। প্রাণ ও প্রকৃতির এই যুগযুগান্তরের দ্বৈরথ নিয়ে লিখিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনি। হারমান মেলভিলের ‘মবিডিক’ সেই অসংখ্য কাহিনির আধুনিক পর্বের একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। জীবিকার টানে যাদের উত্তাল সমুদ্রের বুকে জীবন হাতে নিয়ে ভেসে যেতে হয় তারা সহজপ্রাণ নয়। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অমøমধুর। সমুদ্রে প্রাণঘাতী হাজারো বিপদ তাদের সমুদ্র সম্পর্কে বিতৃষ্ণ করে তোলে আবার বেশিদিন সমুদ্র ছাড়া ডাঙায় থাকতে প্রাণে সয় না। নিত্য বিপদের মুখোমুখি হতে রক্তে যে রোমাঞ্চের অভ্যাস সৃষ্টি হয় তাতে আদিম মানুষের নিউরনস্মৃতি অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়তে সলতেয় আগুন ছোঁয়ায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে নিত্যনতুন অভিযানে। তেমনি কয়েকজন দুর্ধর্ষ নাবিকের অভিযানের চিত্র এঁকেছেন ঔপন্যাসিক হারমান মেলভিল। উত্তম পুরুষের এই কাহিনি বিবৃত করেছেন ইসমাঈল। ধরাবাঁধা জীবন ভালো লাগছিল না বলে সে জাহাজের চাকরির মনস্থ করে। পরিচয় হয় এক হারপুনধারীর সঙ্গে। তারা দুজনে মিলে স্থির করে তিমি শিকারি জাহাজে চাকরি নেওয়ার। সে সূত্রে পরিচয় ক্যাপ্টেন আহাবের সঙ্গে। ক্ষমাহীন সমুদ্রের ওপর রাজত্ব করার মতো ইস্পাতদৃঢ় মনোভাব সেই ক্যাপ্টেনের। যার জীবনের একমাত্র পণ সমুদ্রের রহস্যময় সাদা তিমি মবিডিক শিকার। একবার হাত ফসকের যাওয়ার কারণেই শুধু ক্ষুব্ধ তা নয়, বরং আক্রমণ করে একটি পা পঙ্গু করে ফেলার কারণেও প্রতিশব্দ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ক্যাপ্টেন আহাব। এদিকে মবিডিককে নিয়ে নানা কাহিনি রয়েছে প্রচলিত। তাকে কেউ শিকার করতে পারে না। নিয়তির মতো আবদ্ধ সে। সমুদ্রেই ক্যাপ্টেন আহাবকে ফরাসি নাবিক জানান হাত হারানোর কাহিনি, ইংরেজ ক্যাপ্টেনের পুত্র হারানোর কাহিনি। কিন্তু তাতেও প্রতিশোধপরায়ণ ক্যাপ্টেনের মন টলেনি। শেষ পর্যন্ত অভিযানের কী হলো আর ক্যাপ্টেন আহাব আর মবিডিকের মধ্যে কার জয়, কার পরাজয় হলো, সেটা জানা যাবে উপন্যাসটি পড়লে। আমেরিকান সাহিত্যের ক্লাসিক হয়ে ওঠা উপন্যাসটি সভ্যতা নির্মাণে অবদান রাখা দুঃসাহসিক মানুষের অভিযানপ্রিয়তার দলিল হয়ে আছে। বইটি তোমাদের ভালো লাগবে।

 সুলতানা রাজিয়া

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত