রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

কোরআনের মাস রমজান

আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০৫ এএম

রমজান মাস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি অপার অনুগ্রহ। মানুষ যেন তওবার মাধ্যমে পাপ মোচন করতে পারে, অল্প ইবাদতে অধিক নেকি লাভ করতে পারে, এজন্য আল্লাহতায়ালা পবিত্র রমজান মাস দিয়েছেন। এ মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, এটিও রমজানের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য। এ জন্য রমজানকে বলা হয় কোরআনের মাস। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস, যে মাসে অবতীর্ণ করা হয়েছে কোরআন। যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হেদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নির্দেশনাবলিসম্পন্ন, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য-মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)

রমজান মাসে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, কোনো এক রমজানে পূর্ণ কোরআনকে অবতীর্ণ করে দেওয়া হয়েছে; বরং এর অর্থ এই যে, রমজানের কদরের রাতে ‘লাওহে মাহফুজ’ থেকে নিকটের আসমানে পূর্ণ কোরআন একই সঙ্গে অবতীর্ণ করা হয় এবং সেখানে ‘বায়তুল ইয্যা’-তে রেখে দেওয়া হয়। ওখান থেকে ২৩ বছরের নবুওয়াতি জীবনে প্রয়োজনের তাগিদে এবং অবস্থা অনুপাতে কিছু কিছু করে অবতীর্ণ হতে থাকে। (ইবনে কাসির)

সুতরাং এ রকম বলা যায় যে, কোরআন রমজান মাসে অথবা কদরের রাতে অবতীর্ণ হয়েছে। কারণ ‘লাউহে মাহফুজ’ থেকে তো রমজান মাসেই নাজিল করা হয়েছে। আর ‘লাইলাতুল কদর’ ও ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ পবিত্র বা বরকতময় রাত একটাই রাত। অর্থাৎ তা হলো শবেকদর। আর শবেকদর রমজান মাসেই আসে। কারো কারো নিকট এর তাৎপর্য হলো, রমজান মাসে কোরআন নাজিল আরম্ভ হয় এবং হেরা গুহায় প্রথম ওহি রমজান মাসেই আসে। তাই এদিক দিয়ে কোরআন মাজিদ এবং রমজান মাসের পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই গভীর। আর এ জন্যই নবী কারিম (সা.) এই পবিত্র মাসে জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে কোরআন পুনরাবৃত্তি করতেন এবং যে বছরে তার ইন্তেকাল হয়, সেই বছর তিনি জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে দুইবার কোরআন পুনরাবৃত্তি করেন। রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীগণ ও সাহাবায়ে কেরামও রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। এখান থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা হলো, রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে।

রমজান মাসে রোজা পালন করা ফরজ। আর এ মাসেই কোরআন অবতীর্ণ শুরু হয়েছে। সুতরাং রমজানের সঙ্গে রোজা ও কোরআনের যেমন একটা সম্পর্ক রয়েছে, ঠিক তেমনি কোরআন ও রোজার মধ্যেও একটা পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। তা হলো মহান আল্লাহর নিকট বান্দার জন্য সুপারিশ করা। হাদিস থেকে জানা যায়, রোজা ও কোরআনে উভয়েই কেয়ামত দিবসে বান্দার জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম (অর্থাৎ সে রাত জেগে কোরআন তেলাওয়াত করত। তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতঃপর মহান আল্লাহ উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করবেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৬৬২৬)

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের নেকি ও প্রতিদান অনেক বেশি। নফল ইবাদতের মধ্যে কোরআন তেলাওয়াতই হলো সর্বোত্তম। আর তা যদি হয় পবিত্র রমজান মাসে, তাহলে তো এর নেকি কমপক্ষে ৭০ গুণ বৃদ্ধি পায়। কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর কিতাব (কোরআন) তেলাওয়াত করে, নামাজ আদায় করে, আমার দেওয়া জীবিকা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার, যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা ফাতির, আয়াত ২৯-৩০)

কোরআন কেয়ামত দিবসে তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। আবু উমামা বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করো। কেননা কোরআন কেয়ামত দিবসে তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৮০৪) অপর হাদিসে কোরআন শিক্ষাদানকারী ও শিক্ষাগ্রহণকারীকে সর্বোত্তম মানুষ বলা হয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫০২৭)

যারা ভালোভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারে না, বরং আটকে আটকে কষ্ট করে তিলাওয়াত করে, তাদেরও প্রতিদান রয়েছে আল্লাহর কাছে। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনে দক্ষ ও পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ সম্মানিত ও পুণ্যবান ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবেন। যে ব্যক্তি কোরআন আটকে আটকে তেলাওয়াত করে এবং তা তার জন্য কষ্টকর হয়, তার জন্য দুটি প্রতিদান রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৩৯৩৭) দুটি প্রতিদানের প্রথমটি হলো তেলাওয়াতের, দ্বিতীয়টি তার কষ্টের। মহান আল্লাহ কোরআনের মাসে আমাদের অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার তওফিক দিন। যেন আমরা বেশি বেশি তেলাওয়াতের মাধ্যমে পরকালের নেকির পাল্লা ভারী করতে পারি।

যাদের কোরআন তেলাওয়াত বিশুদ্ধ নয় তাদের উচিত এই রমজান মাসে চেষ্টা করে তেলাওয়াত বিশুদ্ধ করা। রমজান রহমত ও বরকতের মাস। এ মাসে একটু চেষ্টা করলেই মহান আল্লাহতায়ালা বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াতের তওফিক দান করবেন। আর যদি চেষ্টা করার পরও বিশুদ্ধ না হয়, তাহলে চেষ্টা করা বাদ দেওয়া উচিত নয়। আরেকটি জরুরি মাসআলা হলো, যাদের কোরআন তেলাওয়াত এমন বিশুদ্ধও না হয় যে, তাদের নামাজ সহিহ হয় না, তাহলে তাদের তেলাওয়াত বিশুদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে। যতদিন চেষ্টা করে যাবে ততদিন নামাজ সহিহ হবে। যদি চেষ্টা করে ছেড়ে দেয় তাহলে নামাজ সহিহ হবে না।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত