বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ কমিশনের পদত্যাগ দাবিতে দুদিন ধরে অস্থিরতা চলছে বিএসইসিতে। রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পদত্যাগ না করায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবারও কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে পদত্যাগ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
গত বুধবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয় বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএসইসির কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চেয়ারম্যান বা কমিশনার কেউ আসেননি। তবে বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যথাসময়ে অফিসে এসেছেন। কিন্তু তারা কোনো কাজ করছেন না। কর্মকর্তাদের ডেস্ক ফাঁকা দেখা যায়। এমনকি কোনো চিঠিপত্রও আদান-প্রদান করা হচ্ছে না। বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষণা অনুযায়ী তারা সবাই কর্মবিরতি পালন করছেন। তারা অফিসে আলোচনা, কথাবার্তা, ঘোরাঘুরি, গল্প-আড্ডায় সময় পার করছেন। এ ছাড়া বুধবার লাঠিপেটা যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসা এবং শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিচ্ছেন।
এদিকে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তিন কমিশনার গতকাল বেলা ৩টার দিকে আগারগাঁওয়ে নিজেদের কার্যালয়ে আসেন। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিএসইসি ভবনে প্রবেশ করেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান বেলা ৩টার দিকে নিজের গাড়িতে করে আগারগাঁওয়ের কার্যালয়ে পৌঁছান। এ সময় বিএসইসি প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা নিরাপত্তা দিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে নিজ কক্ষে পৌঁছে দেন। একই সময়ে ভবনে প্রবেশ করেন তিন কমিশনার মো. মহসীন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ। পরে তারা বিএসইসি চেয়ারম্যানের কক্ষে চলে যান। সেখানেই তারা অবস্থান করতে থাকেন।
এ সময় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো ধরনের চাপের কাছে কমিশন মাথা নত করবে না। পুঁজিবাজারের অনিয়মসহ যেসব বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং যেসব তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কার্যালয়ে ফিরে বেলা ৩টার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ডেকে এনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর লাঠিপেটা ও হামলা চালিয়ে আহত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত কমিশনার মহসীন চৌধুরী অন্য কমিশনার এবং চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে বিগত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর এবং শোকজসহ নানা হয়রানি করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বর্তমান কমিশনকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। কমিশন কর্তৃক মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে ডেকে কমিশনের-কর্মকর্তা কর্মচারীদের লাঠিপেটা করার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিএসইসির জন্য পুঁজিবাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও যোগ্য চেয়ারম্যান এবং কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে। সংস্কারের অংশ হিসেবে কমিশনকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় নানাভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা পুরোপুরি সত্য নয় বলেও দাবি করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। এজন্য ঘটনার ‘সঠিক’ বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর অন্য সবার মতো বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন, পুঁজিবাজার ও এর নিয়ন্ত্রক সংস্থায় সুদিন ফিরবে। কিন্তু তা হয়নি। অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও সত্য, কমিশন বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়েছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব, সেখানে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পেল একটি অনভিজ্ঞ কমিশন।
অন্যদিকে বিএসইসির অভ্যন্তরে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। গতকাল গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলছে, প্রায় এক বছর ধরে শেয়ারবাজারে নতুন অর্থের জোগান না থাকায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং বাজারে দীর্ঘদিন মন্দাভাব বিরাজমান রয়েছে। বিএমবিএ মনে করে, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা কারও কাম্য নয়। বর্তমানে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এবং বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এ সংকটের দ্রুত সমাধান না করা হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন এবং উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনে নিরুৎসাহিত হবেন। বাজারের বৃহত্তর স্বার্থে চলমান সংকট দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে বিএমবিএ।