গোয়ালন্দ
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া চর কর্নেশন এলাকায় কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। এই অবৈধ কার্যক্রমের ফলে কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট, পরিবেশ দূষন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক কৃষকের ধানসহ জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার আহাজারির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় জিলাল ও গফুর ম-ল নামের দুই ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে তার জমির মাটি কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছেন, ‘আমার ধানসহ জমির মাটি কেটে নিয়ে গেছে। এভাবে আমাদের জীবিকা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।’
সরেজমিন দেখা গেছে, মাটি কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে ব্যাপক হারে মাটি ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ছোট-বড় ট্রাকে করে দিন-রাত মাটি ও বালু বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া ইটভাটায়ও মাটি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মাটি ও বালু পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত রাস্তাটি আক্কাস আলী হাইস্কুলের পাশ দিয়ে গেছে। ট্রাকগুলোর অবিরাম চলাচলের কারণে রাস্তাটি ধসে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অবৈধ মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ‘এই অবৈধ কার্যক্রমের কারণে আমাদের জমি নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। আমরা চাই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান।’ কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমির মাটি কেটে নেওয়ার ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ ছাড়া মাটি ও বালু উত্তোলনের সময় সৃষ্ট ধুলাবালি পরিবেশ দূষত করে এবং স্থানীয় বাস্তুসংস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন কাউকে মাটি কাটার অনুমতি দেয়নি। রাতের আঁধারে মাটি কাটার খবর পেয়েছি। খুব শিগগিরই আমরা অভিযান চালাব। ধানসহ মাটি কাটার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
ফেনী
মো. শফি উল্লাহ রিপন
ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার পর আর্থিক সংকটে পড়ে মাটি বিক্রি করেছি। একই সঙ্গে মাটি দস্যু চক্রটি আমার পাশের ফসলি জমির মাটি ক্রয় করে বেশ কয়েকজন কৃষকের ফসলি জমির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক মাটি বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। নিরীহ কৃষকদের ফসলি জমির ১০-১২ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করে মাটি কেটে চরম ক্ষতি করছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেককে পাশের জমির মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেক সময় জমির মালিককে না জানিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ বলছে না। ফেনীতে ১০৩টি ইটভাটায় চাহিদা ৫ কোটি ঘনফুট মাটি। এই মাটির চাহিদা মেটাতে গিয়ে নষ্ট করছে ফসলি জমি। মাটি পরিবহনে ভারী ট্রাক ও মাহেন্দ্র ট্রলি ব্যবহারে ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত।
ফেনীতে প্রতি বছর ইটভাটায় চাহিদা ৫ কোটি ঘনফুট মাটি। এই মাটির চাহিদা মেটাতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। একদিকে নির্মাণ কাজ বাড়ছে, অন্যদিকে মাটির উৎস নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ইটভাটা মালিকদের। মাটি আর ইটের ভারসাম্য রক্ষায় অনেকটা উভয় সংকটে পড়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। ইটভাটার জন্য মাটি সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় মাটি সংগ্রহ করতে হবে পুকুর, খাল খনন কিংবা পতিত স্থান থেকে। তবে এসব উৎস থেকে ইটভাটায় প্রয়োজনীয় মাটির চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় বলেই বাধ্য হয়ে কৃষি জমির মাটির ওপরে নির্ভর হতে হয় বলে দাবি ভাটা মালিকদের। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও কামরুল হাসান জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক অনেকের জরিমানা করেছি। অনেক মাটি কাটা যন্ত্র অকার্যকর করা হয়েছে। ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিধ মো. একরাম উদ্দিন বলেন,
কৃষিকাজের জন্য টপ সয়েল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিকভাবে ও জৈব ব্যবস্থাপনার ফলে মাটির ওপরের ৬-৭ ইঞ্চি জমির প্রাণশক্তিতে পরিণত হয়। ওপরের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে জমির যে উর্বরতা হারাচ্ছে, তা অর্ধশত বছরেও পূরণ করা সম্ভব নয়।