বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

রোহিতের হাতেই চ্যাম্পিয়নদের ট্রফি

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩১ এএম

নাজমুল হোসেন শান্ত ম্যাচটা দেখেছেন কি না জানা নেই, তবে শিরোপা জিততে যাওয়ার হুংকার দিয়ে লেজেগোবরে করে আসার পর হয়তো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে তিনি যোজন যোজন দূরে। শিরোপা কীভাবে জিততে হয়, কীভাবে দলকে ফাইনালে জেতাতে হয় সেটাই দেখিয়ে দিলেন রোহিত শর্মা। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালের ম্যাচসেরা ভারত অধিনায়ক। নিউজিল্যান্ডকে চার উইকেটে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতেছে ভারত, তাতে বোলার পরিবর্তন আর ব্যাটিংয়ে রোহিত শর্মার বড় অবদান। ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫১ রানে থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। জিততে হলে ৫০ ওভারে ভারতকে করতে হবে ২৫২ রান। কাজটা খুব সহজ না হলেও একেবারে অসম্ভব কিছু নয়, বরং বলা চলে হাতের নাগালেই। রান তাড়ায় শুরুতেই একটা ঝড় বইয়ে লক্ষ্যের সঙ্গে ব্যবধানটা কমিয়ে আনার দায়িত্বটা অনেক দিন ধরেই অধিনায়ক রোহিত নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। শুরুতে শুবমান গিল একটু সাবধানি, রোহিত মারমুখী। ৭.২ ওভারেই দলীয় ৫০ রান উঠে গেল স্কোরবোর্ডে, এ আসরের ভারতের দ্রুততম। পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৬৪। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মেরে শুরু করা রোহিত যে ঝড় তুলতেই নেমেছেন সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গোড়াতেই। সম্ভাব্য সেঞ্চুরিকে জলাঞ্জলি দিলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে স্টাম্পড আউট হয়েছেন, তখন নামের পাশে ৮৩ বলে ৭৬ রান। দেখেশুনে খেললে ফাইনালে একটা সেঞ্চুরি হতেই পারত ‘হিটম্যান’-এর, কিন্তু তাতে করে রানরেটটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়তে দিতে চাননি ভারত দলপতি।

২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সবশেষ আসরের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে একপেশেভাবে হেরেছিল ভারত। আট বছর পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফিরেছে মাঠে, স্বাগতিক পাকিস্তান। তারপরও পাকিস্তানে না গিয়ে, দুবাইয়ের নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সব ম্যাচ খেলে কোনো ম্যাচ না হেরে শিরোপা জিতল ভারত। মধুর প্রতিশোধ বুঝি একেই বলে!

এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতল ভারত। ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শিরোপা ভাগাভাগি করতে হয়েছিল বৃষ্টির কারণে, তবে এরপর ২০১৩ এবং ২০২৫; দুটো আসরের শিরোপা জিতে ৯ আয়োজনের তিনটিতেই শিরোপা জিতে এ আসরের সফলতম দল হিসেবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করল ভারত, ছাড়িয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার দুটো শিরোপাকে।

এমন অর্জনের দিনে রোহিতের কণ্ঠে উদাত্ত প্রশংসা দলের সব সদস্যের জন্য, ‘আমাদের সমর্থন করতে যারা এসেছেন সবাইকে অনেক ধন্যবাদ, আজকের দর্শক ছিল অসাধারণ। এটা আমাদের ঘরের মাঠ না, তবে তারা এটাকে আমাদের ঘরের মাঠই বানিয়ে দিয়েছেন। খুবই তৃপ্তিদায়ক জয়...শুরু থেকেই আমাদের স্পিনাররা খুব ভালো বল করেছে। ওদের ওপর অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু তারা হতাশ করেনি। আমরা বোলিংয়ে খুব ধারাবাহিক ছিলাম। লোকেশ রাহুল খুবই দৃঢ়প্রত্যয়ী মনোভাবের অধিকারী, কখনো চাপে ভেঙে পড়ে না। সে চাপের মুখেও সঠিক শটটাই খেলে, যা অন্যদের কাজটা সহজ করে দেয়। যেমন হার্দিক। আমাদের সবারই ব্যাটসম্যানশিপ অন্য একটা পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। বরুণের কথা যদি বলি, সে একটু আলাদা। এ রকম একটা উইকেটে খেলা হলে তার মতো কাউকে যেকোনো অধিনায়কই দলে রাখতে চাইবে। সে শুরু থেকে খেলেনি, পরে শুরু করেছে, আর উইকেট পেয়েছে। সমর্থকদের কাছেও কৃতজ্ঞ। এমনিতে হয়তো বোঝা যায় না, তবে যখন তারা আসে, সেটা ব্যবধান গড়ে দেয়।’

মিচেল স্যান্টনারও হতাশ নন, ‘ভালো একটা টুর্নামেন্ট কেটেছে। আমরা দল হিসেবে আরেকটু বড় হয়ে উঠছি, আমরা একটা শ্রেয়তর প্রতিপক্ষের কাছেই হেরেছি। তারা ভালো বোলিং করেছে। আমরা পাওয়ার প্লের পর একজোড়া উইকেট হারিয়েছি, আর ওরাও চেপে ধরেছে। এ উইকেটে রোহিত বলতে গেলে প্রতি বলেই রান করেছে, এটা অসাধারণ। রাচিনকে আমরা দেখেছি বড় মঞ্চে জ¦লে উঠতে, ওর সামনে দারুণ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আইসিসি আসর উপভোগ করেছি, দারুণ একটা আয়োজন।’

অবশেষে কোনো আইসিসি আসরের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারল ভারত। ২০০০ সালের কেনিয়া ফিরল না ২০২৫-এর দুবাইতে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে রানার্সআপ, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন এবং ২০২৫ সালের আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন ভারত প্রমাণ করল এই সময়ের ক্রিকেটে, অন্তত সাদা বলে তাদের শ্রেষ্ঠত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কোনো দল নেই।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত