পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেছেন তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটির ফেডারেল সরকারের খরচ কমানোর দায়িত্ব দিয়েছেন ইলন মাস্ককে। সেজন্য সরকারি দক্ষতা বিভাগ নামে একটি বিশেষায়িত সংস্থাও সৃষ্টি করা হয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার এক্সে দেওয়া পোস্টে মাস্ক লেখেন, এখনই ন্যাটো থেকে বের হয়ে যাও। ওই পোস্টকে সমর্থন করে মাস্ক আরেক পোস্টে বলেন, ইউরোপের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিই ন্যাটো থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত।
আগামী মাসে ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন- ন্যাটো। এমন সময় মাস্কের এ মন্তব্য সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্কারোপ করার হুমকি দিয়ে এসেছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া তার পুতিন-প্রীতিও ইউরোপীয়দের শঙ্কায় ফেলেছে। শুধু তাই নয়, ন্যাটোর ছত্রছায়ায় ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে নিরাপত্তা পেয়ে থাকে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প।
এর আগে, গত ৬ মার্চ এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা কীভাবে পুনর্গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি জোটটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা এমনভাবে পুনর্গঠন করতে চান, যাতে শুধু প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির নির্দিষ্ট অংশ ব্যয় করা সদস্যরাষ্ট্রগুলোই সুবিধা পায়। স্নায়ুযুদ্ধের পর প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় কমিয়ে দেওয়া ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোতে যোগাযোগ, গোয়েন্দা তথ্য, লজিস্টিকস থেকে শুরু করে কৌশলগত সামরিক নেতৃত্ব ও আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই নির্ভরশীল। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা গত সপ্তাহে ব্রাসেলসে জরুরি সম্মেলনে মিলিত হন। সেখানে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যাপক ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। ইইউ কর্মকর্তারা ইউরোপীয় কমিশনের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন, যাতে প্রতিরক্ষার জন্য সদস্যদেশগুলোকে সর্বোচ্চ ১৫০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি চার বছরে দেশগুলোকে প্রতিরক্ষা খাতে ৬৫০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করার অনুমোদন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইইউ ডিফেন্স কমিশনার আন্দ্রিয়াস কুবিলিয়াস বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা অস্থির পরিস্থিতি লক্ষ করছি। শেষপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ২০২৩ সালের একটি আইন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ন্যাটো থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যেতে পারবেন না।