গত কয়েক বছর ধরেই অর্থনীতিসহ নানা বিষয় নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে নেপালে। দেশের অবস্থা নিয়ে চলমান এই অসন্তোষের মধ্যেই নেপালে পুনরায় রাজতন্ত্র চালুর দাবি জানিয়েছে দেশটির হাজার হাজার মানুষ। রবিবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানিয়ে দেশটির বাতিল হওয়া রাজতন্ত্র পুনরায় চালু করার দাবি করেন তারা।
সাবেক এই রাজা দেশটির পশ্চিমাঞ্চল সফর শেষে রাজধানীতে ফিরলে তাকে স্বাগত জানাতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ১০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়। এ সময় উপস্থিত জনতা রাজার জন্য রাজপ্রাসাদ খালি করুন, রাজা ফিরে আসুন, দেশকে বাঁচান এবং আমরা রাজতন্ত্র চাইসহ বিভিন্ন ধরনের সেøাগান দেন। বিমানবন্দরের প্রবেশপথে জ্ঞানেন্দ্রর সমর্থকরা জমায়েত করায় যাত্রীরা পায়ে হেঁটে বিমানবন্দরে প্রবেশ এবং ত্যাগ করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেয় কয়েকশ দাঙ্গা পুলিশ। ৭৭ বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র ২০০১ সালে বড় ভাই বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা গণহত্যায় নিহত হওয়ার পর সিংহাসনে বসেন। তিনি ২০০৫ সাল পর্যন্ত সাংবিধানিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শাসন করেছিলেন। তবে তার কোনো নির্বাহী বা রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না। পরে তিনি পুরো ক্ষমতা দখল করেন। পরে তিনি দেশটির নির্বাচিত সরকার ও সংসদ ভেঙে দেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারাবন্দি করেন, যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সেনাবাহিনী দিয়ে দেশ শাসন শুরু করেন। এই পদক্ষেপগুলো থেকে নেপালে বিশাল বিক্ষোভের সূচনা হয়। ২০০৬ সালে দেশ জুড়ে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। সরকার মাওবাদীদের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। যা দশকের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটায় এবং হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি রোধ করে। ২০০৮ সালে জ্ঞানেন্দ্র সংসদের ভোটে সিংহাসন ত্যাগ করেন। এর ফলে নেপালের ২৪০ বছরের পুরনো হিন্দু রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। তবে এরপর থেকে নেপালে ১৩টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং অনেকেই প্রজাতন্ত্র নিয়ে হতাশ। তারা মনে করেন, প্রজাতন্ত্র রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এটি অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যাপক দুর্নীতির জন্য দায়ী।