ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) সংযুক্ত নতুন এলাকার বাসিন্দাদের হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হলেও কাক্সিক্ষত নাগরিক সেবা পাচ্ছেন না তারা। নাগরিকদের অভিযোগ, জন্ম-মৃত্যু সনদ থেকে শুরু করে পদে পদে অতিরিক্ত অর্থ বা ঘুষ দিতে হচ্ছে। কিন্তু রাস্তাঘাটসহ নাগরিক সেবার কোনো বালাই নেই। গতকাল মঙ্গলবার গুলশান নগর ভবনে ডিএনসিসি আয়োজিত গণশুনানিতে নতুন ১৮ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এমন অভিযোগ করেছেন।
গণশুনানিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, বাজার কমিটির নেতা, পাড়া মহল্লাভিত্তিক সোসাইটি নেতা এবং যুবক, ছাত্র প্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজন অংশ নেন। তারা রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ-পার্ক, জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রব, সড়কবাতি না থাকা, জন্ম ও মৃত্যু সনদ নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের কাছে।
৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আশরাফুল হক অভিযোগ করেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স ঠিকমতো আসছে না, এর মূল কারণ ঘুষ বাণিজ্য। এটা বাংলাদেশের একটা মহা সমস্যা। ঘুষ বাণিজ্যের কারণে আমরা ট্যাক্স দিচ্ছি না। দেখা গেছে ৩ লাখ টাকার ট্যাক্স ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে ১ লাখ ২০ হাজার করে দিচ্ছে।’
৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের তলনা এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ মিয়া গণশুনানিতে বলেন, ‘ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসেবে তারা ২০১৮ সাল থেকে সিটি করপোরেশনকে কর দিচ্ছেন। কিন্তু সেবা পাচ্ছেন না।’ তিনি বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে আমরা সিটি করপোরেশনে, এখন ২০২৫ সাল চলে। সিটি করপোরেশন ১৮টি ওয়ার্ডে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন দেখাতে পেরেছে? ট্যাক্স নিচ্ছেন কিন্তু আমাদের কী সেবা দিচ্ছেন?’
সাদেক আহমেদ রিপন নামের একজন বলেন, আশকোনার মদিনা টাওয়ার থেকে দক্ষিণখান পর্যন্ত আব্বাসিয়া সড়কের একটি অংশ এখনো পানিতে ডুবে থাকে। পানি এত নোংরা যে লোকজন নামাজ পড়তে যেতে পারছেন না, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, দক্ষিণখানের কোথাও কোনো পানি নেই। কিন্তু আমাদের ওই রাস্তা এখনো পানির নিচে। বর্ষার আগেই আমাদের ওই সড়কে বর্ষা চলছে। আমরা চাই ওই রাস্তাটি চলাচলযোগ্য করা হোক।
৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাত্তার চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকের মৃত্যু সনদের জন্য সাত হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য কাজেও দিতে হয় উৎকোচ। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমার স্কুলের শিক্ষক মারা গেছেন। সেখানে মৃত্যু সনদ আনতে গিয়ে আমাকে সাত হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। জন্মনিবন্ধন করাতে গেলে ফি লেখা আছে ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা। কিন্তু আপনি যান, দেখবেন আপনার কাছে ২০০, ৩০০ টাকা চেয়ে বসে থাকে।’ এসব কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।