ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে শুল্ক আরোপের সবশেষ পদক্ষেপের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কানাডা পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ায় আরও শুল্ক আরোপের অঙ্গীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিবিসি লিখেছে, এই হুমকি বাণিজ্য যুদ্ধের উত্তেজনা আরও তীব্র করেছে। আর তাতে অর্থনীতি ও ভোক্তার ওপর প্রভাব নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি করেছে, তা বিশ্বের অনেক দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজারকেও নাড়া দিয়েছে।
ট্রাম্প গত বুধবার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর মার্কিন শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেন, আরোপ করেন ২৫ শতাংশ শুল্ক। সেই সঙ্গে কিছু দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আমদানি শুল্কছাড় সুবিধা প্রত্যাহার করেন। তার আগে চলতি মাসের শুরুর দিকেই এক আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশে উন্নীত করা হয়।
তামা, কাঠ, গাড়িসহ যেসব পণ্য কোনো দেশে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে শুল্ক আরোপ করা হয়, সে ধরনের পণ্যেও শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, অবশ্যই পাল্টা ব্যবস্থা নেবেন। আগামী মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ‘পাল্টা’ শুল্ক হার প্রকাশ করবেন।
কানাডা ও ইউরোপের নেতারা ধাতুর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ককে অযৌক্তিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক বসিয়েছেন। অবশ্য যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশ, যারা যুক্তরাষ্ট্রে ধাতু সরবরাহ করে, তারা তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দেখে অন্য সবার মতো আমিও হতাশ। তবে আমরা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেব। কানাডা জানিয়েছে, তারা ইস্পাত, কম্পিউটার, খেলার সামগ্রীসহ প্রায় ৩০ বিলিয়ন কানাডীয় ডলারের মার্কিন পণ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ শুরু করার কথা।
কানাডার হবু প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, ট্রাম্প যতক্ষণ ‘কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা’ দেখাবেন, ততক্ষণ নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চালিয়ে যেতে তিনি রাজি। ইইউ জানিয়েছে, তারা ১ এপ্রিল থেকে নৌকা, বার্বন, মোটরবাইকসহ ২৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়াবে।
ইইউ প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন বলেছেন, তারা চেয়েছেন, তাদের জবাব যেন ‘শক্তিশালী, কিন্তু সংগতিপূর্ণ’ হয়। আর ইইউ ‘অর্থবহ’ সংলাপে বসতেও প্রস্তুত রয়েছে। ট্রাম্পের ভাষ্য, তিনি দীর্ঘ মেয়াদে তার দেশে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন বাড়াতে চান। আর সে কারণেই এসব পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বসিয়েছেন।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই আমদানি শুল্ক তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন ভোক্তাদের কাছে দাম বাড়ার কারণ হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, কোয়েকার ওটস, ফলজার্স কফির মতো প্যাকেটজাত খাদ্য প্রস্তুতকারকরা ট্রাম্পের কাছে কোকো ও ফলের মতো পণ্যে শুল্কছাড় চেয়েছে। এ রকম একটি চিঠিও তারা দেখেছে।
পেপসিকো, কোনাগ্রা এবং জে এম স্মুকারের মতো কোম্পানি প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছে, তাদের পণ্যের যেসব উপাদান যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায় না, সেসবে যাতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। বাণিজ্য সংগঠন কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে এই অনুরোধ জানিয়েছে কোম্পানিগুলো।