বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

মানুষের মতো বাঁচার লড়াই

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:৪১ এএম

আজ আমরা আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখছি তার মধ্যে যন্ত্রের আধিক্যই বেশি। এই প্রচণ্ড গরমের দিনে মাথার ওপরে ঘুরছে ফ্যান, বাতাসে শরীর জুড়িয়ে যাচ্ছে। ফ্যান একটা যন্ত্র। বহুতল ভবনের সবচেয়ে উঁচু তলায় উঠতে হলে কতগুলো সিঁড়ি ভাঙতে হতো বলো তো? কিন্তু এখন কত সহজেই না লিফটের সাহায্যে ওপরে উঠতে পারছ। লিফট একটা যন্ত্র। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হবে। যদি তোমাকে হেঁটেই যেতে হতো তাহলে কী হতো বলো তো? বাস, প্রাইভেট কার বা মেট্রোরেলের মতো যন্ত্র ছিল বলেই না সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারছ। এভাবে চারপাশে চোখ বুলালে দেখবে আমাদের চারপাশে অসংখ্য যন্ত্র রয়েছে, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে তুলেছে। এসব বিজ্ঞানের অবদান। একবার ভাব তো, যখন এসব যন্ত্র ছিল না তখন মানুষ কী করত? তখন মানুষ যে কাজ নিজের জন্য কষ্টকর মনে হতো সেই কাজগুলো আরেকজন মানুষকে দিয়ে করিয়ে নিত। এর জন্য যে বেতন দিতে হতো তার পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে গেলে তারা গোটা মানুষটিই একবারে কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা করল। এরপর সেই মানুষকে দিয়ে যা ইচ্ছা তা করিয়ে নিত। কিন্তু প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা করে অর্থ পরিশোধ করা লাগত না। যাকে এভাবে কিনে নেওয়া হতো তাকে বলা হতো দাস, ক্রীতদাস আর যে কিনত তাকে বলা হতো মালিক, অর্থাৎ ওই ক্রীতদাসের মালিক। মালিক তার ক্রীতদাসের সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করতে পারত। না খাইয়ে রাখা, অত্যাচার করা, অত্যধিক পরিশ্রম করানো, এমনকি হত্যা করা কোনো কিছুতেই তাকে কোনো জবাবদিহি করতে হতো না। মানুষকে এভাবে দাস হিসেবে ব্যবহারের যে নিয়ম বা প্রথা সেটাই দাসপ্রথা নামে পরিচিত। বুঝতেই পারছ, দাসরা ছিল তো মানুষ, কিন্তু জীবনটা মানুষের ছিল না। অধিকাংশ সময়ে তাদের জীবন ছিল মানুষের বাড়িতে পোষা প্রাণীর থেকেও খারাপ।

প্রাচীন সভ্যতাগুলোর অন্যতম সভ্যতা হলো, রোমান সভ্যতা। এই সভ্যতায়ও দাসপ্রথা ছিল। গৃহস্থালি কাজগুলো তো বটেই, তারা দাসদের পরস্পরের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্ব যুদ্ধ করতে বাধ্য করত। আর তারা দর্শক সারিতে বসে এই মরণপণ যুদ্ধ ও হত্যা দৃশ্য দেখে আমোদ অনুভব করত। এই অসুস্থ বর্বর প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন স্পার্টাকাস। তিনি নিজেও ছিলেন একজন দাস, শুধু দাস নন, বংশানুক্রমিক দাস। তার দাদা ছিলেন দাস, বাবা ছিলেন দাস, নিজেও দাস। দাস হলেও তার মধ্যে মানবিকতার বিকাশ হয়েছিল। তার নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিল অন্য গ্লাডিয়েটররা। তিনি তাদের সঙ্গে নিয়ে রোমান সভ্যতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নিজদের মতো বাঁচতে শুরু করেন, মানুষের মতো। পরপর পাঁচবার রোমান বাহিনি স্পার্টাকাসদের কাছে। ষষ্ঠবারে স্পার্টাকাসরা পরাজিত হয়, মৃত্যুবরণ করে। স্পার্টাকাস তার সঙ্গীদের বলছিলেন, ‘দাসদের ধর্ম হলো বেঁচে থাকা’। আর তাদের এই বিদ্রোহ ছিল দাস পরিচয়কে পেছনে ফেলে মানুষ পরিচয় লাভ করা, মুক্ত মানুষ হওয়া। তাদের লড়াই ছিল, মানুষের মতো বাঁচার লড়াই। আজও মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগানো এই কাহিনি তোমাদের ভালো লাগবে।

সুলতানা রাজিয়া

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত