প্রত্যেক নেক আমলের বিভিন্ন ফজিলত ও সওয়াব রয়েছে, যা দ্বারা মহান আল্লাহ আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোজার বিষয়টি একেবারেই স্বতন্ত্র। কারণ রোজার বহুবিধ প্রতিদান ছাড়াও এ বিষয়ে একটি অতুলনীয় ঘোষণা রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের প্রত্যেকটি আমল বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। একটি নেকি ১০ গুণ থেকে (ক্ষেত্রবিশেষে) ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। কারণ রোজা আমার জন্য। সুতরাং সেটার প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব।’ (সহিহ মুসলিম ১১৫১)
বর্ণিত হাদিসে দুটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। এক. রোজা ছাড়া অন্যসব আমলের সওয়াব বৃদ্ধির ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। তা হলো ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত। এটি সাধারণ নিয়ম। আল্লাহতায়ালা চাইলে বিশেষ ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশিও দিতে পারেন। তবে সাধারণত সব আমলের সওয়াব এ নীতির মাধ্যমেই নির্ণিত হয়। কিন্তু রোজার বিষয়টি স্বতন্ত্র। কারণ এর সওয়াবের নির্ধারিত কোনো সীমারেখা নেই, বরং আল্লাহতায়ালা নিজে এর সওয়াব প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। এর পরিমাণ যে কত হবে, তা একমাত্র তিনিই জানেন। রোজার এত বড় ফজিলতের একটি বাহ্যিক কারণ এটাও হতে পারে যে, রোজা ধৈর্যের ফল। আর ধৈর্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহর সুসংবাদ হলো, ‘ধৈর্যধারণকারীরাই অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে।’ (সুরা জুমার ১০) দুই. সব ইবাদত আল্লাহর জন্য। রোজার বহুবিধ বিশেষত্বের কারণে মহান আল্লাহ সেটাকে শুধু নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘রোজা তো আমারই জন্য।’ তাই রোজার অগণিত প্রতিদান তিনি নিজেই দান করবেন বলে রোজাদারকে সুসংবাদ দিয়েছেন। (লাতায়িফ ১৬৮)
হাদিসে রোজাদারের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার ও প্রতিদানের কথা বিবৃত হয়েছে। সেগুলোর কয়েকটি হলো রোজা কিয়ামত দিবসে সুপারিশ করবে। হাদিসে এসেছে, ‘রোজা ও কোরআন মজিদ কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে পূর্ণ বিরত রেখেছি। তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। কাজেই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ ৬৬২৬)
রোজা জাহান্নামের আগুনের ঢাল ও দুর্গ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি ঢাল ও দুর্গ হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ ৯২২৫) রোজাদার জান্নাতের রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি শাহি দরজা আছে, যা দিয়ে একমাত্র রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহিহ বোখারি ২৫৪) রোজাদারের জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসসহকারে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানের রোজা রাখে, আল্লাহ তার জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ বোখারি ১৯০১)
রোজাদারের দোয়া কবুল করা হয়। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। রোজাদার ব্যক্তির দোয়া ইফতার পর্যন্ত, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান ৩৪২৮) রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘রোজাদার ব্যক্তির আনন্দ উপভোগের দুটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে। একটি ইফতারের সময়, অন্যটি স্বীয় প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (সহিহ মুসলিম ১১৫১)
লেখক : প্রিন্সিপাল, পদুয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা, ফেনী