বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

উদ্বোধনের আগেই মিলছে সুফল

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৫, ০২:২১ এএম

উদ্বোধনের অপেক্ষায় সিরাজগঞ্জ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে গত বছরের ১৪ জুলাই। এরপর থেকে পূর্ণলোডে নিরবচ্ছিন্নভাবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এসেছে কেন্দ্রটি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কেন্দ্রটি উদ্বোধন হয়নি। তবে কেন্দ্রটির সুবিধা পাচ্ছেন সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মানুষ।

সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ এলাকার যমুনা নদীর অববাহিকায় যমুনা রেলওয়ে সেতুর পাশে বাংলাদেশ ও চীনের দুটি কোম্পানির যৌথ অর্থায়নে ২১৪ একর জমির ওপর এই বিশাল সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প অফিস সূত্রে জানায়, বাংলাদেশের এনডব্লিউপিজিসিএল (নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড) এবং চীনের সিএমসি (চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন) যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ‘সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পার্ক’ নামে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৮৮০ কোটি টাকা।

চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) ডেপুটি ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, যমুনা নদীপাড়ের অব্যবহৃত কৃষিজমি বাংলাদেশ ও চীনের দুটি কোম্পানি বাংলাদেশ-চায়না রিনিউবেল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিআরইসিএল) নামে যমুনা সেতু কর্র্তৃপক্ষের কাছ থেকে ২১৪ একর জমি ২৫ বছরের মেয়াদে লিজ নেয়। এরপর ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পিপিএ (পাওয়ার পার্সেজ অ্যাগ্রিমেন্ট) এবং আইএ (ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪ সালের ৯ জুলাই প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও আমরা ৩০ জুন থেকেই উৎপাদন শুরু করেছি। প্রথমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৮ থেকে ১৭ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এখন পূর্ণলোডে ৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক তানভীর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ৯ জুলাই। আমরা নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদন শুরু করতে সক্ষম হয়েছি।’

সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে পূর্ণলোডে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ সরকার পরিবর্তন হওয়ায় এখনো কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। চলতি রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কথা বিবেচনা করে ও সেচ মৌসুম শুরু হওয়ায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কৃষকদের সেচযন্ত্র সচল রাখার স্বার্থে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এই রমজানে লোডশেডিং কমে গেছে।

লাম এন্টারপ্রাইজের প্রজেক্ট ম্যানেজার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এখানে রয়েছে কন্ট্রোল বিল্ডিং, অফিসার ডরমিটরি, রেস্ট হাউজ, নিরাপত্তা ভবন। ব্যতিক্রম এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উঁচু পিলারের ওপর সোলার প্যানেল বসানোর কারণে নিচে বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করা যাবে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি ফসলের চাষাবাদ করে খাদ্যঘাটতি হ্রাস করা সম্ভব হবে।’

এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশেই গড়ে উঠছে বিসিক শিল্প পার্ক ও সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল। বিসিক শিল্প পার্কের কাজ শেষের দিকে। সেখানে প্লট বরাদ্দ চলছে। ফলে এখানে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানায় খুব সহজে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। নতুন এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে হঠাৎ এখানে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের পথ আরও সুগম হয়েছে।

শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের যমুনা নদীর চরের কুরসী গ্রামের ইয়াসিন মোল্লা বলেন, ‘এ বছর সেচ মৌসুমের শুরু থেকেই আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছি। তাই আমি ৬০ বিঘা জমিতে দুটি সেচযন্ত্র স্থাপন করেছি। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ থাকায় সঠিক মাত্রায় জমিতে সেচ দিতে পারছি। ইতিমধ্যেই ধানের থোড় বের হওয়া শুরু করেছে। ফলে এ বছর ইরি-বোরোর আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আমরা খুব খুশি।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত