মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় জাকাত

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:১৩ এএম

রমজানের একটি নফল ইবাদত অন্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান এবং একটি ফরজ ইবাদত অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমান। তাই আশা করা যায়, রমজানে জাকাত আদায় করলে অন্য সময়ের তুলনায় ৭০ গুণ বেশি সওয়াব হবে। এ মাসে জাকাত আদায়ে উৎসাহিত করতে জাকাতের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী কাজী মালিহা আকতার

জাকাত ফরজ ইবাদত

পবিত্র কোরআনে নামাজের পর সবচেয়ে বেশি জাকাতের কথা উচ্চারিত হয়েছে। যাদের বার্ষিক খরচের পর সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ বা সেটার সমমূল্য সম্পদ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমাণ রুপা বা সেটার সমমূল্য সম্পদ গচ্ছিত থাকে তাহলে তাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়। এর নির্দিষ্ট সময় নেই, তবে নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর পূর্ণ হলে জাকাত দেওয়া কর্তব্য। এক্ষেত্রে কিছু লক্ষণীয় বিষয় হলো, সম্পদের ওপর পূর্ণ মালিকানা থাকা, সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়া, মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ হওয়া এবং ঋণমুক্ত হওয়া। জাকাত আটটি খাত রয়েছে। তা হলো ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী, নও মুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে অবস্থানরত ব্যক্তি ও মুসাফির। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টন হয় এবং ধনী-গরিবের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়।

তানজিনা আক্তার

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ

জাকাতের গুরুত্ব

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে জাকাত অন্যতম। কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর অতিবাহিত হলে তার ওপর জাকাত ফরজ হয়। জাকাত প্রযোজ্য হওয়ার সম্পদসমূহ হলো নগদ টাকা, সোনা, রুপা, সব ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য, গবাদিপশু ও নির্দিষ্ট

কৃষিপণ্য। চলতি বছর জাকাতের নেসাব ৯৫ হাজার টাকা। কোনো ব্যক্তি কমপক্ষে ৯৫ হাজার হাজার টাকার মালিক হলে এবং সেই টাকা তার অধীনে এক বছর থাকলে নির্দিষ্ট খাতে শতকরা ২.৫% হারে জাকাত আদায় করতে হবে। জাকাত সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করে। জাকাত প্রদান না করলে সম্পদ পবিত্র হয় না। ইসলামে জাকাত আদায়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা জাকাত প্রদান করে না তাদের শাস্তি সম্পর্কে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যেদিন সেই ধনসম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তা দ্বারা তাদের কপাল, তাদের পাঁজর ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে, (এবং বলা হবে) এই হচ্ছে সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যে সম্পদ পুঞ্জীভূত করতে, সেটার মজা ভোগ করো।’ (সুরা তওবা ৩৫)

সুরাইয়া আফরিন হিয়া

শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া

পরিশুদ্ধি অর্জনে জাকাত

অভাবীদের ন্যায্য হক পূরণের সুন্দর ব্যবস্থাপনা জাকাত। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সামাজিক ভারসাম্য যেমন রক্ষা হয়, তেমনি সম্পদের পবিত্রতা ও আত্মশুদ্ধিও অর্জন হয়। চাহিদার অতিরিক্ত কিছু সঞ্চয় করলে তা যদি সঠিক ব্যবস্থাপনায় সীমাবদ্ধ না থাকে, তাহলে তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কেননা অতিরিক্ত ধনসম্পদ অর্জন এবং সঞ্চয় মানুষকে উচ্চাবিলাসী ও অহংকারী করে তুলে। বংশ-মর্যাদা, শ্রেণিবৈষম্য ও আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা মানুষকে অন্ধ করে তোলে। সম্পদের দাপটে মানুষ ভুলে যায় তার মানবিক দায়িত্ববোধ, ভুলে যায় নিজেদের অস্তিত্ব ও শেকড়। অঢেল সম্পদ অর্জনে ব্যস্ত হয়ে সৃষ্টির সেরা হিসেবে মানুষের প্রতি মানুষের যে করণীয়, তা নিমিষেই আমরা ভুলে যাই। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থাপনায় দেখা যায় বংশ, গোত্র ও গোষ্ঠীভিত্তিক বিভাজন। অর্থ-সম্পদ অর্জনের অহমিকায় আত্মীয়স্বজনের প্রতি দায়িত্ববোধ সম্পর্কে উদাসীন হয়ে যায়। অথচ ইসলামে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর হক আদায়ে সোচ্চার হতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে জাকাতের বিধান একটি ফলপ্রসূ ব্যবস্থাপনা। জাকাত সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন, ধর্মীয় মূল্যবোধ পালন এবং অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হক প্রদানের মাধ্যম এবং এটি অর্থ-সম্পদের ভারসাম্য আর বিশুদ্ধতার পাশাপাশি সামাজিক সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করে। বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ অর্জনে অহংকারবোধের প্রবণতা রোধ করে জাকাত। এ জন্য ইসলামে জাকাতকে বাধ্যতামূলক

করা হয়েছে।

নুসরাত জাহান জেরিন

শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইন কলেজ

বৈষম্য নিরসনে জাকাত

জাকাত ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, যা ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সম্পদের ভারসাম্য রক্ষা করে সমাজের বৈষম্য কমায়। এটি দরিদ্র, অভাবী ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার। জাকাত প্রদান করলে নগদ অর্থের যেমন হাতবদল হয় তেমনি সম্পদে গতিশীলতা বাড়ে। সঠিকভাবে জাকাত আদায় করলে সমাজে ধনী-দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য হ্রাস, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়ে, অপরাধ প্রবণতা কমে এবং আর্থসামাজিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মুসলিম অর্থনীতিবিদ ইবনে খালদুন তার ‘মুকাদ্দিমা’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘জাকাত একটি কার্যকর সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থা, যা অর্থনীতিতে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।’ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা ধনীদের সম্পদে গরিবদের হক নির্ধারণ করেছেন, যা তারা প্রদান না করলে কেয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ (তাবারানি) জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনীরা তাদের সম্পদ পরিশুদ্ধ করে আর গবিবরা তাদের অধিকার লাভ করে। ফলে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস পেয়ে সাম্য ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায়।

তানজিনা আক্তার চৈতি

শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত