বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

জাদুর কলম

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:১৩ এএম

মিতু ক্লাস টুতে পড়ে। ভারি মিষ্টি মেয়ে। যেমন চটপটে তেমনি বুদ্ধিমতী।

মিতুর সব ভালো কিন্তু সে ক্লাসে একটুও পড়া পারে না। পারে না বললে অবশ্য ভুল হবে। আসলে সে একটুও পড়ে না, বাড়িতে না পড়লে কি ক্লাসে পড়া পারা যায়! মিতুও

পারে না। হোমওয়ার্কের জন্য প্রতিদিন শিক্ষকদের কাছে বকাঝকা শোনে মিতু। আব্বুকে হেডস্যার বেশ কয়েকবার ইশকুলে ডেকে কৈফিয়ত পর্যন্ত নিয়েছেন।

আব্বু অবশ্য মিতুকে সে জন্য কিছু বলেননি। আসলে আব্বু মিতুকে এত ভালোবাসেন যে, মিতুকে একটা ধমক দিয়েও কথা বলেন না। সে জন্য আম্মু নাখোশ। তার ধারণা মিতুকে আব্বু বকাঝকা করেন না বলেই মিতু দিন দিন বিগড়ে যাচ্ছে। আম্মুর ভাষায়, ‘বেশি আদরে মেয়েটা বাদর হয়ে গেছে’।

আব্বু বাসায় থাকলে মিতুকে আর পায় কে! ইশকুল থেকে ফিরেই মোবাইলে ভিডিও গেমস খেলে। আব্বু না থাকলে সে অবশ্য মোবাইল হাতের কাছে পায় না। তখন কী আর করার, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে খেলাধুলা আর খুনসুটি করে। এ ছাড়া আর কোনো কাজ যেন নেই ওর। আম্মু অবশ্য মিতুকে শাসন করে পড়ার টেবিলে বসাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সবই হয়েছে পণ্ডশ্রম। আম্মুর শাসন তাতে মাত্রা ছাড়িয়ে হয়েছে অতিশাসন। তাতেই যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে মিতু। তাই দেখে আম্মু আর শাসন করতে যান না। মিতু আছে মিতুর মতো, আম্মু আছেন আম্মুর মতো।

আব্বু-আম্মু মিতুকে কীভাবে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলা যায় তার অন্য উপায় খোঁজা শুরু করলেন। কী করা যায়, কী করা যায় ভাবতে লাগলেন। আব্বু খেয়াল করলেন, ইদানীং মিতুর ম্যাজিকের প্রতি খুব ঝোঁক বেড়েছে। আব্বু একটি সুন্দর বুদ্ধি আঁটলেন। রাতে ডিউটি থেকে আসার সময় একটা ভারি সুন্দর কলম কিনলেন।

বাসায় এসে মিতুকে ডেকে বললেন,

‘মিতু, তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি।’

‘কী গিফট আব্বু?’

‘এই দেখো, জাদুর কলম।’

‘কই দেখি আব্বু?’ মিতু খুশিতে আত্মহারা।

আব্বু বললেন, ‘মিতু, এই জাদুর কলম ব্যবহারের জন্য কিছু নিয়ম আছে। আগে সেগুলো জেনে নাও’।

‘কী নিয়ম আব্বু?’ খুশিতে মিতুর চোখ চকচক করছে।

‘এই জাদুর কলম দিয়ে তুমি যা লিখবে তাই খুব দ্রুত লিখতে পারবে আর এই কলম তোমার কাছে থাকলে ক্লাসে তুমি সবসময় পড়া পারবে। কিন্তু এই কলম তখনই কাজ করবে যখন তুমি লেখার আগে ভালোভাবে পড়াটা বুঝে শুনে আয়ত্ত করে নেবে। যেটা মুখস্থ করার মুখস্থ করে নেবে। না হলে কলমটা কিন্তু তার জাদু দেখাবে না।’

‘আচ্ছা আব্বু, এখন থেকে আমি প্রতিদিন ঠিকমতো পড়া তৈরি করব।’

মিতু কলমটি নেড়েচেড়ে দেখল। এ রকম ভালো আর চমকপ্রদ উপহার মিতুকে কেউ কখনো দেয়নি। মিতু প্রবল উৎসাহে ক্লাসের সব পড়া তৈরি করে ফেলল। তারপর খাতা নিয়ে লিখতে বসল। বাহ! খুব সুন্দর তো, তাড়াতাড়ি লেখা যায়! পরদিন ক্লাসে মিতু সুন্দরভাবে পড়া বলতে পারল।

সেদিনের পর থেকে কোনো ক্লাসেই মিতুর পড়া ভুল হয় না। শিক্ষকরা জিজ্ঞেস করলেই সুন্দর উত্তর দেয়, লিখতে বলে সবার আগে লিখে জমা দেয়। আগের মতো হোমওয়ার্কের জন্য আর মিতুকে বকাঝকা শুনতে হয় না। স্যার-ম্যাডাম সবাই মিতুকে এখন খুব ভালোবাসে।

এর মধ্যে একদিন হয়ে কী, হঠাৎ মিতুর জাদুর কলমটি হারিয়ে গেল। সে পুরো বাড়ি, বই-খাতা-ব্যাগ তন্নতন্ন করে খুঁজল। কিন্তু কোথাও তার জাদুর কলমটি পেল না। পরদিন সে জাদুর কলম ছাড়াই ইশকুলে চলে গেল।

ইশকুলে যাওয়ার পর মিতু ভাবতে থাকে, ‘প্রতিদিন তো জাদুর কলমের জন্য বেঁচে যাই কিন্তু আজ কী হবে?’

মনে মনে মিতু খুব ভয় পাচ্ছিল। ‘স্যার যদি আজকে পড়া ধরে বসে?’

ভাবতে না ভাবতেই স্যার ক্লাসে এসে মিতুকে পড়া ধরলেন। মিতু দুরুদুরু বুকে উঠে দাঁড়াল। তবে পড়া তৈরি করা ছিল বলে উত্তর দিতে তেমন কোনো অসুবিধা হলো না। শিক্ষককে তরতর করে সব পড়া শুনিয়ে দিল।

এরপর থেকে প্রতিদিন সে জাদুর কলম ছাড়াই ভালোভাবে পড়া শোনাতে পারে।

এক সময় মিতু বুঝতে পারল, ওসব জাদুর কলমটলম কিচ্ছু না, বাড়িতে ভালোভাবে পড়ালেখা করলেই ক্লাসে ভালোভাবে পড়া পারা যায় আর শিক্ষকদের বকাঝকা থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত