রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

গ্যাস সংকট কাটবে?  

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৮ এএম

গ্যাস সংকটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরনো সরবরাহ লাইন, চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০ কোটি ঘনফুট হলেও সরবরাহ মাত্র ২৬০ কোটি ঘনফুট। এই বিশাল ঘাটতির কারণে রাজধানীসহ সারা দেশে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি লেগেই রয়েছে। মোট চাহিদার ৬২ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে জ্বালানি বিভাগ। এতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন। কয়েক বছর ধরে গ্যাস সংকট চলছে, এখন তা প্রকট হয়েছে। সংকট লাঘবে দেশি গ্যাসের অনুসন্ধানে জোর দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পরিকল্পনাধীন ১০০টি কূপ খনন প্রকল্প থেকে জরুরি ভিত্তিতে তারা এ বছরই অন্তত সাতটি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। পুরনো কিছু গ্যাসকূপের ওয়ার্কওভারও করা হবে।

কূপ খনন, কূপের ওয়ার্কওভার করলেই কি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যাওয়া যাবে? তাতে কি মোট চাহিদা মিটবে? অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো নয়। কারণ ১৯৯৫ সালের জ্বালানি নীতিমালায় বছরে চারটি অনুসন্ধান কূপ খননের কথা বলা হলেও কোনো সরকারই সে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যেতে পারেনি। ফলে পুরনো কূপগুলোতে গ্যাসের মজুদ কমছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন দেশি গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলা করে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানিতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রবল ঝোঁকের কারণে গ্যাস সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। লেগে থাকলে এ সংকট সমাধানে সফলতা আসত। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের আগ্রহ কম। কারণ একটি কূপে গ্যাস না পাওয়ার পরই আমরা হতাশ হয়ে যাই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন- একটি কূপে গ্যাস না পাওয়া গেলে, পরেরটা থেকে বিরত থাকা যাবে না। চেষ্টা চালাতে হবে। তবেই সফলতা মিলবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ২৯টি চলমান প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে।  আর মোট তেল গ্যাস অনুসন্ধান ব্লক রয়েছে ৪৮টি। গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করতে পারছে ২৫০ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উচ্চ দামে এলএনজি আমদানি করে দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। একশ কূপ খনন প্রকল্প থেকে ৭টি কূপ এগিয়ে এনে ২০২৫ সালেই খনন করতে চায় পেট্রোবাংলা। সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় ৭টি কূপ চলতি বছরেই খনন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি কতগুলো কূপের ওয়ার্কওভার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদনের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম চমৎকার একটি কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘অনুসন্ধানে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সরকারের আরও আগেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। তবে দেরি হলেও এটা ভালো উদ্যোগ। দেশের জ্বালানি সংকট নিরসনে এর কোনো বিকল্প নেই।’

গ্যাস অনুসন্ধানে গত ১০ বছরে বাপেক্স নতুন ১০টি ক্ষেত্রে অনুসন্ধান চালিয়েছে।  এর মধ্যে মাত্র দুটিতে বড় সাফল্য পেয়েছে। দুটিতে পেয়েছে সামান্য গ্যাস। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের এই চিত্র হতাশ হওয়ার মতোই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থলভাগের অনেক জায়গা জরিপ করা হয়নি। যার ফলে গ্যাসের সম্ভাবনা নিয়ে এখনই সিদ্ধান্তের সময় আসেনি। যে কারণে গ্যাস সংকট নিরসনে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে, সংকট নিরসনে দেশি গ্যাস সন্ধানেই জোর দিতে হবে। কিন্তু অনেকের আগ্রহ গ্যাস আমদানিতে। কী কারণে এমন তৎপরতা, তা অনেকেই জানেন। দেশি গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিলে অবশ্যই আমরা নতুন কূপের সন্ধান পাব এবং বৈদেশিক নির্ভরতা কাটিয়ে উঠব নির্দিষ্ট সময়ে। যদিও এটা দেশি-বিদেশি অনেক পক্ষই চায় না। গত কয়েক বছরে একাধিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা এলেও  দেশে গ্যাসের সংকট কমেনি, বরং আরও বেড়েছে। এমনকি বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করেও সংকটের সমাধান আসেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে জ্বালানি নিয়ে সরকারের নেওয়া ভুলনীতির কারণেই গ্যাস সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ, সারকারখানা, আবাসিক, পরিবহন খাতে ব্যবহারের কারণে গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। অনেক কর্মকর্তার আশঙ্কা, বড় ধরনের মজুদ পাওয়া না গেলে ৮  থেকে ১০ বছরের মধ্যে দেশের গ্যাস ফুরিয়ে যাবে। এরপর কী হবে? যে কারণে সংকট নিরসনে দেশি গ্যাস সন্ধানে জোর দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত