নারীদের সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন গঠন করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রদানের পাশাপাশি তাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার ওপরও জোর দিয়েছে। ইসলামের বিধিবিধানের মাধ্যমে নারীজীবন সুস্থ, নিরাপদ ও উন্নত হয়। পৃথিবীতে নেমে আসে স্বর্গীয় প্রাণবন্ত সুখ। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণী উল্লেখ করা হলো।
আধ্যাত্মিক সুস্থতার সবক : নারীদের আধ্যাত্মিক সুস্থতা গোটা সমাজের জন্য রহমত স্বরূপ। আধ্যাত্মিক সুস্থতা মানে হলো ইমান ও তাকওয়ার ওপর দৃঢ় থাকা, অন্তরের প্রশান্তি অর্জন এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা। প্রকৃত সুখ ও প্রশান্তি আসে আত্মার সুস্থতা থেকে। কোরআনে আধ্যাত্মিক সুস্থতার প্রাথমিক প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা ইমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো! আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়। (সুরা রাদ ২৮) বর্তমানে নারীদের মধ্যে অনেক ধরনের বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলো ক্রমান্বয়ে তাদের মূল্যবোধকে দুর্বল করে তুলছে। কোরআন সুন্নাহর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণে তাদের আধ্যাত্মিক সুস্থতা নিশ্চিত করা হলে সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে যাবে। ইমানের বিচ্ছুরিত নুরে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারবে এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে দৃঢ় থাকতে পারবে। নুমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সে গোশতের টুকরোটি হলো কলব।’ (সহিহ বুখারি ৫০)
শারীরিক সুস্থতায় পানাহার : নারীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। শারীরিক শক্তি, হরমোনের ভারসাম্য, প্রজনন স্বাস্থ্য ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার অপরিহার্য। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা খাও, পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ ৩১) পরিমিত আহার করাই ইসলামের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী। অতিভোজনে অভ্যস্ত হওয়া কোনো মুমিন নারী-পুরুষের উচিত নয়। এটা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর। খুব বেশি খেলে শরীর সুস্থ থাকবে এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক নয়। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেলে তাতে উপকারের বদলে ক্ষতিই বেশি হয়। ওমর (রা.) বলেছেন, সাবধান! পেট ভরে পানাহার করবে না। এতে শরীর নষ্ট হয়, অসুখ-বিসুখ দেখা দেয় এবং নামাজে আলস্য লাগে। পরিমিত খাবে। এটাই শরীরের জন্য উপযোগী। তাছাড়া তাতে অপব্যয় থেকেও বাঁচা যায়। খাদ্য গ্রহণে এই মূলনীতি সুস্থ থাকার বড় একটি মাধ্যম। মিকদাম ইবনে মাদি কারাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করলে পেট ভরে, ততটুকু খাদ্য কোনো ব্যক্তির জন্য দূষণীয় নয়। যতটুকু আহার করলে মেরুদণ্ড সোজা রাখা যায়, ততটুকু খাদ্যই কোনো ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট। এরপরও যদি কোনো ব্যক্তির ওপর তার নফস (প্রবৃত্তি) জয়যুক্ত হয় তবে সে তার পেটের এক-তৃতীয়াংশ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (ইবনে মাজাহ ৩৩৪৯)
পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করা : শরীরের সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তির জন্য ঘুম অত্যন্ত উপকারী অনুষঙ্গ। বিশেষ করে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম স্বাস্থ্যরক্ষার অন্যতম শর্ত। যদি পারিবারিক দায়িত্ব, সন্তান প্রতিপালন ও নানা ধরনের মানসিক চাপের কারণে ঠিকমতো ঘুম না হয় তাহলে তাদের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নারীদের সুস্থতার জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। ইসলামে রাতের ঘুমকে প্রশান্তি ও দেহ-মনের বিশ্রামের মাধ্যম বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাতকে করেছি আবরণস্বরূপ আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য।’ (সুরা নাবা ৯-১১) রাতে দেরিতে ঘুমালে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া দেরি করা ঠিক নয়।
আত্মীয়স্বজনের সান্নিধ্যে যাওয়া : বিয়ের পর নারীরা বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সবাইকে ফেলে স্বামীর বাড়িতে যায়। অপরিচিত মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে বসবাস করতে শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে তাদের মনে মাঝেমধ্যে পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনের সাক্ষাৎ লাভের আগ্রহ ও বাসনা সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এজন্য ফকিহরা স্ত্রীর পিত্রালয়ে গমনকে তার ন্যায্য অধিকার হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও সামাজিকভাবে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ একজন নারীকে আরও সুখী, সুস্থ ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তবে অবশ্যই এর জন্য ইসলামের বিধান মেনে চলা জরুরি। পিত্রালয় দূরত্বের সফরে হলে যাতায়াতের সময় সঙ্গে স্বামী বা কোনো মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে। আশপাশে বাপের বাড়ি হলেও স্বামীর অনুমতি নিয়ে যেতে হবে।