বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল যা শেখায় না

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৯ এএম

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের সুনাম দুনিয়াজোড়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ধনকুবের, সেলিব্রেটি, টেক জায়ান্ট কে না পড়েছেন হার্ভার্ডে। তবে এমন যে বিখ্যাত হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল সেই শিক্ষায়তনও কি সবকিছু শেখায়? না, শেখায় না। কিন্তু একটু চেষ্টা আর নিয়মিত অনুশীলন করলেই অতিপ্রয়োজনীয় সেই না শেখানো গুণাবলিতে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন দক্ষ। লিখেছেন লিজা হক

বাস্তব অভিজ্ঞতার মূল্য

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল ব্যবসা তৈরি ও পরিচালনার নানা বিষয় শেখায়। কিন্তু এসব কিছুই তাত্ত্বিক পরিসরে। তত্ত্বের কাগুজে বাঘ বাস্তবের ঝড়ঝঞ্ঝায় উড়ে যেতে সময় লাগে না। হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েটরা তখন পড়েন অকুল পাথারে। তাই শুধু হার্ভার্ডের ডিগ্রি নয়, প্রয়োজন বাস্তব অভিজ্ঞতার। বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া হার্ভার্ডের ডিগ্রি হয়ে পড়বে মূল্যহীন। আর যদি বাস্তবের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে হার্ভার্ডের ডিগ্রি তাতে যুক্ত করবে নতুন মাত্রা। এই কথাটি অবশ্য শুধু হার্ভাড গ্র্যাজুয়েটদের জন্যই প্রযোজ্য তা নয়, বরং সবার জন্য প্রযোজ্য। তাই যারা হার্ভার্ড বা বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাননি তারাও বইয়ের পোকা না হয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য মাঠে নেমে পড়ুন।

সম্পর্ক তৈরি

ব্যবসায় সফল হতে হলে অবশ্যই আপনার থাকতে হবে একটি মজবুত সম্পর্কের ভিত্তি এবং এই সম্পর্কের পরিসরটি হতে হবে সমাজের বিভিন্ন পেশার সেরা মানুষদের সঙ্গে। তাদের কাছ থেকে আপনি যে পরামর্শ, প্রজ্ঞা উৎসারিত দিকনির্দেশনা ও নানা রকমের সহায়তা পাবেন তার তুলনা অন্য কিছু হতে পারে না। এই সাহায্যের আদান-প্রদান একপাক্ষিক হবে না তা বলাই বাহুল্য। তারা যেমন আপনার সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে কাজ করবেন, তেমনি আপনি তাদের সাপোর্ট সিস্টেমের অংশ হয়ে উঠবেন। সম্পর্ক তৈরির এই কৌশল আপনাকে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল শেখাবে না। আপনার সামাজিকীকরণ, আবেগিক বুদ্ধিমত্তা প্রভৃতি আপনাকে সহযোগিতা করবে।

ঐকমত্যে আনার দক্ষতা

ব্যবসায় প্রতিপক্ষ থাকবে। থাকবে ক্রেতা, উৎপাদনকারী। একজন ব্যবসায়ীকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে লেনদেন করতে হয়। আলাপ-আলোচনা মাধ্যমে উভয়ের জন্য লাভজনক ব্যবসায়িক লেনদেনের পরিসর খুঁজে না পেলে ব্যবসা এগিয়ে যায় না। দুই বা ততোধিক পক্ষকে ঐকমত্যে আনার দক্ষতা আপনাকে নিজেই অর্জন করতে হবে। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল এটা শেখায় না। 

শেখার নিরন্তর প্রক্রিয়া

যে ব্যক্তি বাস্তবে কাজে নেমে পড়েছেন তিনি জানেন চলার পথে অনেক সমস্যা আসে, যা সমাধান করেই চলার পথ করে নিতে হয়। এটি পথের বৈশিষ্ট্য, এটি পথচলার অঙ্গ। কিন্তু ক্লাসরুমের একজন শিক্ষানবিশ সব প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নামতে চায়। এটি যে একদম অবাস্তব ধারণা এটি উপলব্ধি করতে হলেও আপনাকে হার্ভার্ডের বাইরে অর্থাৎ বাস্তব জীবনে নেমে আসতে হবে। হার্ভার্ড এটিও শেখাতে পারে না।

ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা

ব্যর্থতাকে মেনে না নিতে পারলে আপনি কখনো তাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন না। ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়ার মাধ্যমেই নিজের ত্রুটিকে খুঁজে বের করা যায়। আর তার সমাধান বের করে এগিয়ে নেওয়া যায় ব্যবসা।

স্বতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা

কোনো একটি বিষয়ে স্বতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নাম হলো সজ্ঞা। এই ক্ষমতা অর্জিত হয় ওই বিষয় সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, অন্তর্দৃষ্টি ও পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার কারণে। অনেক সময় গাণিতিক হিসেবেও যে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে যায়, সেই সিদ্ধান্তই একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি ব্যবসায়ী সজ্ঞা দ্বারা নিতে পারেন।

ফলাফলকেন্দ্রিক মনোভাব

তাত্ত্বিক জগতে নানা কিছু বিবেচনায় এলেও বাস্তব জগতে মূল্যায়িত হয় শুধু ফল দেবে এমন প্রক্রিয়া। এই মনোভাবও বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া অর্জন করা যায় না। আর কোনটি ফল দেবে আর কোনটি দেবে না সেটিও বাস্তবে-মাঠে না নামলে জানা যায় না।

(মার্ক এইচ ম্যাক্রোম্যাক-এর ‘হোয়াট দে ডোন্ট টিচ ইউ অ্যাট হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল’ বইয়ের তথ্যাবলম্বনে)

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত