২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযান শুরু করলে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের শুরু হয়। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত। এই যুদ্ধে দুই দেশই ব্যাপক সামরিক-বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে সম্প্রতি তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধের অবসানে ৩০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে কিয়েভ-মস্কো উভয় পক্ষই সম্মতি জানিয়েছে। এর মধ্যেই রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরের ওপর ব্যাপক মাত্রায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে হতাহতের ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাময়িক এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সায় দেয় ইউক্রেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের প্রস্তাবে সমর্থন করেন পুতিনও। তাতে দ্রুতই অঞ্চলটিতে সংঘাত থামার প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। তবে পুতিনও বলেছিলেন যে, মস্কোর দেওয়া শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রুশ বাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। যাকে আবার যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রবিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট ইউক্রেনের মোট ৩১টি ড্রোন রাশিয়ার আকাশসীমায় ধ্বংস করেছে। টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর মধ্যে ১৬টি ড্রোন ভোরোনেজ অঞ্চলের ওপর, ৯টি বেলগোরোদ অঞ্চলে এবং বাকিগুলো রোস্তভ ও কুরস্ক অঞ্চলের আকাশে ভূপাতিত করা হয়েছে।
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বেলগোরোদ অঞ্চলে ৭ বছর বয়সী শিশু তিনজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর ভিয়াচেসøাভ গ্ল্যাডকভ। টেলিগ্রামে তিনি আরও জানান, গুবকিনস্কি জেলায় একটি ড্রোন একটি বাড়িতে আঘাত করলে আগুন ধরে যায় এবং এতে দুজন আহত হয়। আরেকজন ডলগোয়ে গ্রামে একটি ড্রোন হামলায় আহত হয়েছে। ভোরোনেজের গভর্নর আলেকজান্ডার গুসেভ টেলিগ্রামে বলেছেন, এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত গভর্নরও জানিয়েছেন যে, সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের বা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনের কর্র্তৃপক্ষ রাশিয়ার বেশ কয়েকটি ড্রোন হামলার খবর দিয়েছে। ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, চেরনিহিভ অঞ্চলে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় একটি উঁচু ভবনে আগুন ধরে যায়। দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। ইউক্রেনের গণমাধ্যম রাজধানী কিয়েভের আশপাশের অঞ্চলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে।
এদিকে, পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে দখলকৃত ঘাঁটি থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে হটিয়ে দেওয়ার জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। অঞ্চলটিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, রাশিয়া তাদের কুরস্ক অঞ্চলে থাকা ইউক্রেনীয় সেনাদের নিষ্কৃতি দেবে যদি কিয়েভ তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলে। অঞ্চলটিতে ভয়াবহ গণহত্যা এড়ানোর জন্য পুতিনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আহ্বান জানানোর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন। তবে কিয়েভের সেনাদের ঘেরাও করে রাখার এ দাবি নাকচ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এই খবর অস্বীকার করে এটিকে রাশিয়ার মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেন তিনি। তবে সেখানকার পরিস্থিতিকে অত্যন্ত কঠিন বলে অভিহিত করেছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব সুমি অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনী সম্ভাব্য নতুন আক্রমণের মুখোমুখি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ের পর জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভের সৈন্যদের কুরস্কে ঘেরাও করা হয়নি। তবে মস্কো পৃথক হামলার জন্য কাছাকাছি এলাকায় বাহিনী জড়ো করছে। তিনি আরও বলেন, এটি আমাদের সুমি অঞ্চলে আক্রমণ করার অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দেয়। আমরা এটি সম্পর্কে সচেতন এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করব। আমি চাই আমাদের সমস্ত অংশীদাররা পুতিন কী পরিকল্পনা করছেন, তিনি কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং তিনি কী উপেক্ষা করবেন তা ঠিকভাবে বুঝতে পারুক। সেই সঙ্গে তিনি জানান, পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্কের কাছে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে সফলভাবে একটি নতুন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। লং নেপচুন নামের এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনী ইউক্রেনীয় সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সুদজার কাছে আরও দুটি গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে।